মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদ ঘোড়াঘাট(দিনাজপুর)।।
দিনাজপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একাধিক, জামায়াত বিএনপির একক।দিনাজপুরে ৬ আসন বিরামপুর,নবাবগঞ্জ ,হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট নিয়ে গঠিত। এ চারটি উপজেলার ২৩ ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ আসন থেকে জামায়াত দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও বিএনপির কোন প্রার্থী এখন পর্যন্ত বিজয়ী হতে পারেনি। তবে আওয়ামী লীগ ৫ বার এ আসনটি দখল করেছে। এখনও আওয়ামী লীগের দখলে। জামায়াত সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হলেও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভালো। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন এবার জয়লাভে তারাও আশাবাদী।
নব্বইয়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এ আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতের আজিজুর রহমান চৌধুরী নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান ফিজু, ২০০১ সালে জামায়াত, ২০০৮ সালে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুর পর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শিবলি সাদিক নির্বাচিত হন।
এদিকে জাতীয় পাটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি শিবলী সাদিকের চাচা, জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। আগামী নির্বাচনে চাচা কিংবা ভাতিজা যে কেউ একজন প্রার্থী হলে অপর জন ছাড় দিতে পারে বলে জানা গেছে। তবে মহাজোটের আরেক শরিক দল ন্যাপ-এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সাবেক এমপি কাজী লুৎফর রহমান এ আসনে মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হতে চাইবেন বলে তার অনুসারীরা জানান।
ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর,বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর-৬আসন।এই আসনটি দীর্ঘদিন থেকেই বিএনপি-জামায়াতের আসন হিসেবে পরিচিত।তবে গত২০০৮সালের নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত আসনটি নিজেদের দখলে রেখেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরব হয়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াত।মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
দিনাজপুর=৬আসনটি থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় ৮ জনের নাম শোনা যাচ্ছে।তারা হচ্ছেন-বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলীসাদিক জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা, সাবেক সংসদ সদস্য ড. আজিজুল হক চৌধুরী,নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান,ঘোড়াঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাফে খন্দকার শাহানসা, বিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মণ্ডল এবং ভারপাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পারভেজ কবীর।
এখনও পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মতবিনিময় সভা, কর্মী সমাবেশ ও বিভিন্ন ভাবে প্রচারণায় এগিয়ে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। ফেসবুক, পোস্টার ও ফেস্টুনে দোয়া, সমর্থন চেয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা, রহমান,ঘোড়াঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাফে শাহানসা, বিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।
বর্তমান সংসদ সদস্য ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শিবলী সাদিক বলেন, আমি আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান। আমার বাবা মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।বঙ্গবন্ধু কন্যা, আওয়ামীলীগের দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচিত হয়েছি। আমি শত ভাগ আশাবাদী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নৌকার মাঝি হিসেবে এই আসনে আমাকেই মনোনীত করবেন! এমপি শিবলী সাদিক আরো বলেন,চার চার বার সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা নিয়ে চারটি উপজেলায় রাস্তাঘাট ব্রীজ কালভাট স্কুল কলেজের বির্ডিংসহ ব্যাপক উন্নয়ন মুলক কাজ হয়েছে। এবং চারটি উপজেলার ছাত্র সমাজ যুব সমাজ থেকে শুরু করে সর্ব স্থরের মানুষ আমার সাথে আছে।
দিনাজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতা বলেন, আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক দলের দিক থেকে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।কোনো কোনো উপজেলায় দলীয়মান-অভিমান আছে। তবে নৌকা প্রতীক যে পাবে নির্বাচন মাঠে তার পক্ষে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই এবং কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেনা আশা রাখছি।সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড বিবেচনায় দিনাজপুরের সব কয়টি আসনেই আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করবে ইনশাআল্লাহ আশা রাখছি।
এই আসেন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য ড. আজিজুলহক চৌধুরী বলেন, ২০০৮সালে মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করে আওয়ামীলীগের এই আসনটি পুনরুদ্ধার করেছি।
নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী বিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিজানুররহমান বলেন, আমিব ঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি।আমি দীর্ঘদিন থেকে এই উপজেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। নৌকার মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে আমি আশাবাদী।
নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণসম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দোয়া ও সমর্থন চেয়ে ইতি মধ্যে পোস্টার, ফেস্টুন তৈরি করে চার উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে দিয়েছেন তার সমর্থকরা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দোয়া ও সমর্থন চেয়েয়েছেন, রহমান,ঘোড়াঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রাফে খন্দকার শাহানসা,তিনি ইতি মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মতবিনিময় সভা, কর্মী সমাবেশ ও বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা, পোস্টার, ফেস্টুন তৈরি করে চার উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে দিয়েছেন তার সমর্থকরা।
এই আসনটি থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার ব্যক্তি গত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হাসান এই আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন বিএনপির নেতা কর্মীরা । তার পক্ষে মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় নেতারা।
জামায়াতের প্রার্থী আজিজুর রহমান চৌধুরী ১৯৯১ সালে এককভাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তিনি ২০০১ সালেও চারদলীয় জোটের এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তিনি মারা যান। এরপর নবম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের ড. আজিজুল হক চৌধুরী। ওই সময় জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম।
দিনাজপুর (দক্ষিণ) সাংগঠনিক জেলা জামায়াতের আমির এবং সম্ভাব্য প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জোট ভিত্তিক নির্বাচন বিষয়টি পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবেন। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই আসেনা।
এই আসনের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আমি প্রতি দ্বন্দ্বিতা করেছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। বাকিটা আমাদের দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক হবে।