হাবিবুর রহমান,লক্ষীপুর প্রতিনিধি।।
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে একটি কংক্রিট ব্লক তৈরির কারখানা স্থাপন করেছে তিশা ইকো কংক্রিট ব্লগ এন্ড ব্রিকস। সম্প্রতি লক্ষীপুর কমলনগর উপজেলার হাজির হাট ইউনিয়নের চর জাঙ্গালিয়া ৪নং ওয়াডে তিশা কংক্রিট ব্লগ এন্ড ব্রিকস নামে নতুন কারখানাটি চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ৪০ শতাংশ জমিতে স্থাপিত কারখানায় বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। এখানে দৈনিক ০৪ থেকে ০৫ হাজার পিস ব্লক উৎপাদিত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, তাদের কারখানাটিতে দৈনিক ১০থেকে ১২ হাজারের বেশি ব্লক উৎপাদন করা যায়,তবে নতুন করে শুরু করার কারনে একটু কম করে উৎপাদন করা হচ্ছে।
পরিবেশবান্ধব হওয়ায় দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে। তাই কমলনগরে এই সর্বপ্রথম তিশা কংক্রিট ব্লগ এন্ড ব্রিকস স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ করা হবে। তবে সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তা পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ব্লক রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি কমলনগর হাজির হাট মেঘনা সিনেমা হলের পাশে নতুন কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, চীন থেকে আমদানি করা প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফুল অটোম্যাটিক ব্লক প্রসেসিং যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনের কাছাকাছি শ্রমিক কাজ করছেন কারখানাটিতে।
বালু, পাথর ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্লক। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান– সিলেট, সুনামগঞ্জ, ছাতক, দিনাজপুর ও নেত্রকোনা থেকে বালু ও পাথর সড়ক ও নদীপথে আনা হয়। পরে এর সঙ্গে মেশানো হয় সিমেন্ট। নির্দিষ্ট অনুপাতে এসব কাঁচামাল মেশানো হয়। স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে কয়েকটি ধাপে সেগুলো বিভিন্ন ডাইসে হাইড্রোলিক প্রেশারের মাধ্যমে ব্লক তৈরি হয়।
তিশা কংক্রিট ব্লগ এন্ড ব্রিকস এর মালিক মোঃ আজাদ জানান এখানে এখন ৫ থেকে ৬ ধরনের ব্লক তৈরি করছে। ব্লকের সক্ষমতা ইটভাটায় কয়লা দিয়ে পোড়ানো ইটের থেকে অনেক বেশি। এই ইট তৈরিতে পরিবেশ দূষণ হয় না। নির্মাণকাজে অর্থ সাশ্রয় হয়। সাধারণ ইটের চেয়ে ব্লকের শক্তি, কার্যক্ষমতা ও উৎকর্ষ অনেক বেশি। লবণাক্ততা ও ভূমিকম্পসহিষ্ণু এবং পানি প্রতিরোধে সক্ষম। ভবন তৈরিতে ব্লক ব্যবহার করলে সহজেই বৈদ্যুতিক লাইন ও পানির পাইপ বসানো যায়।
তিশা কংক্রিট ব্লগ এন্ড ব্রিকস এর কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্লকের চাহিদা। ইতোমধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প, ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্প, পূর্বাচলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে এর ব্যবহার বাড়ছে। ব্লক রাস্তায় ব্যবহার করলে প্রয়োজন হলে তুলে ফের প্রতিস্থাপন করা যায়। কোনো কারণে ব্লক ভাঙলেও প্রতিস্থাপন করা যায়।
বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিশা কংক্রিট ব্লগ এন্ড ব্রিকস এর মালিক পক্ষ্য মোঃ সিরাজ জানায়, কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের কারণে প্রতিনিয়ত উষ্ণ হয়ে উঠছে বায়ুমণ্ডল। এতে পরিবেশের পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের। কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য অন্যতম দায়ী ইটভাটা। দেশে বর্তমানে ২৪ হাজারের বেশি ইটভাটা রয়েছে। প্রতি বছর এসব ইটভাটায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি পিস ইট পোড়ানো হয়। এতে বছরে সাড়ে ১৬ লাখ টন কৃষিজমির মাটি নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি কয়লা পোড়াতে হচ্ছে ৭৬ লাখ টন। ফলে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। হারাচ্ছে জমির উর্বরতা। বায়ুদূষণ কমাতে ও কৃষিজমিকে সুরক্ষা দিতে নির্মাণ খাতে ইটের পরিবর্তে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। সবাই কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারে আগ্রহী হলে পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা-সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন সহজ হবে।
তিশা কংক্রিট ব্লকের হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং মোঃ রাজু বলেন, দেশে বছরে ১ লাখ ৮৩ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে বায়ুদূষণের কারণে। তাই নির্মাণকাজে ইটের পরিবর্তে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা দরকার। সরকারের সহায়তা পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।