ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিনের সামরিক উত্তেজনার পর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির মধ্যেই তেহরান একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের পরিকল্পনা পাস করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ইরান সরাসরি পশ্চিমা প্রভাব ও চাপে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
বুধবার (২৫ জুন) ইরানের পার্লামেন্টে এই বিলটি অনুমোদন পায়। সরকারি বার্তা সংস্থা নূর নিউজ জানায়, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। বিলটি অনুযায়ী, ভবিষ্যতে আইএইএ পরিদর্শকরা ইরানে প্রবেশ করতে পারবেন শুধুমাত্র ওই পরিষদের সরাসরি অনুমোদন এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সাপেক্ষে।
পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ জানান, ‘আইএইএ আমাদের পরমাণু স্থাপনায় হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানোর পরিবর্তে নিরব থেকেছে। এতে আন্তর্জাতিক মহলে তাদের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তির কার্যক্রমকে আমরা আরও গতিশীল করব।’
চলতি মাসের শুরুতে আইএইএ অভিযোগ করে যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের বিরুদ্ধে পূর্ব প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে। তবে তেহরান বরাবরই পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে এবং বলেছে, এই অভিযোগের আড়ালেই ইসরায়েল তাদের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি কাতারের সংবাদমাধ্যম আল-আরাবি আল-জাদিদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা আমাদের পরমাণু কর্মসূচি ও বিস্তার নিয়ন্ত্রণের পূর্ব দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারি। তবে সেটা কোন দিকে যাবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
বিলটি অনুযায়ী, আইএইএ’র সঙ্গে সব ধরনের নজরদারি কার্যক্রম — যেমন ক্যামেরা স্থাপন, পরিদর্শন এবং প্রতিবেদন প্রণয়ন — সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। গত সপ্তাহেই সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি এই বিলের খসড়া অনুমোদন করে। কমিটির মুখপাত্র ইব্রাহিম রেজাই বলেন, ‘এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরমাণু স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কেবল আইএইএ নয়, বরং সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি এক প্রকার বার্তা। যুদ্ধবিরতির অব্যবহিত পরেই এমন ঘোষণা আসা এবং তার পেছনে পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রশ্ন তোলা – ইরানের কৌশলগত অবস্থানকে স্পষ্ট করে