সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) সক্ষমতা বাড়াতে নতুন জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে শিগগিরই সংস্থাটির বহরে যুক্ত হচ্ছে দুটি নতুন জাহাজ। সংস্থাটির নিজস্ব অর্থে কেনা দুটি জাহাজের প্রথমটি বিএসসির বহরে আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্ত হবে আর নভেম্বরের শেষে দ্বিতীয়টি যুক্ত হবে। তাছাড়া নতুন ওই দুই জাহাজের পাশাপাশি আরো তিনটি নতুন জাহাজ কেনার প্রক্রিয়াও বিএসসি শুরু করেছে। সরকারি অর্থায়নে ওই তিন জাহাজ কেনার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে বিএসসি তিনটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শেষ করতে চায়। বিএসসি বহরে ওসব জাহাজ যুক্ত হবার পর সংস্থাটির পণ্য পরিবহন সক্ষমতা আরো বাড়বে। বিএসসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাহাজের দিক দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এখনো বেসরকারি খাতের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যদিও সরকারি খাতের যাত্রা শুরুর পাঁচ বছর পর এ শিল্পে বেসরকারি খাত যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ১৬টি কোম্পানির ৯৫টি জাহাজ রয়েছে। আর বিএসসির বহরে মাত্র পাঁচটি জাহাজ রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকার এবং দুটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের উপযোগী বাল্ক জাহাজ। নতুন দুটি বাল্ক জাহাজ যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে ৭টিতে উন্নীত হবে। নতুন দুই জাহাজ থেকে বছরে বাড়তি ১৫০ কোটি টাকা আয়ের আশা করা হচ্ছে। আর ওই দুই জাহাজে পালাক্রমে বছরে ১৫০ নাবিকের কর্মসংস্থান হবে।
সূত্র জানায়, সমুদ্রপথেই বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের বড় অংশই পরিবহন করা হয়। প্রতিবছরই বাড়ছে ওই বাণিজ্য। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত অর্থবছর ১৩ কোটি টন পণ্য পরিবহন হয়। কনটেইনার, তেল পরিবহনকারী জাহাজ ও সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজে ওসব পণ্য পরিবহন হয়। আর ওসব পণ্যের বড় অংশই বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে পরিবহন হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা কম। ‘এমভি বাংলার দূত’ জাহাজের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের জুনে বিএসসির সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যবসা শুরু হয়। সংস্থাটির বহরে ১৯৮২ সালের মধ্যে ২৭টি জাহাজ যোগ হয়। পর্যায়ক্রমে ওই সংখ্যা ৩৮টিতে উন্নীত হয়। কিন্তু ১৯৯১ সালের পর ওই সংস্থার বহরে নতুন কোনো জাহাজ যুক্ত হয়নি। বরং জাহাজের সংখ্যা কমে এক পর্যায়ে দুটিতে নেমে আসে। তারপর ২০১৮-১৯ সালে সংস্থাটি ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকায় ৬টি নতুন জাহাজ সংগ্রহ করে। তার মধ্যে একটি জাহাজ দুর্ঘটনায় পরিত্যক্ত হয়। বিএসসির বহরে জাহাজ বাড়লে নিজেদের আমদানি পণ্য পরিবহন করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। পাশাপাশি বিদেশ থেকে পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা যাবে। তাছাড়া দেশি পতাকাবাহী জাহাজে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। সেই সঙ্গে নতুন নাবিকরাও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে।
সূত্র আরো জানায়, প্রায় ১০ হাজার টন ধারণক্ষমতার ‘এমভি আল সালমা’ জাহাজ নিবন্ধনের মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে বেসরকারি খাতে শুরু হয় এই ব্যবসা। এটলাস শিপিং লাইনস বেসরকারি খাতে প্রথম এই ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে বেসরকারি খাতে কেএসআরএম গ্রুপের সবচেয়ে বেশি ২৮টি জাহাজ রয়েছে। আর মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) রয়েছে ২৫টি জাহাজ। তারপরের অবস্থান মোট ১০টি জাহাজ নিয়ে আকিজ শিপিং রয়েছে। বিএসসির কোম্পানি বা সংস্থা হিসেবে অবস্থান ষষ্ঠ।
এদিকে বিএসসি নতুন দুটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া গত জুনে শুরু করে। বিএসসি নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছিল। তার মধ্যে দুটি প্রস্তাব কারিগরিভাবে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৩৬ কোটি টাকায় জাহাজ দুটি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। জাহাজ দুটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের উপযোগী বাল্ক জাহাজ। প্রতিটির পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানটি চীনের নেন ইয়াং শিপইয়ার্ড থেকে জাহাজ দুটি সরবরাহ করবে। তার মধ্যে একটি জাহাজের নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সেটি সেপ্টেম্বরের শেষে বিএসসির কাছে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। আরেকটি জাহাজের কাজ ৫০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। ওই জাহাজ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে হস্তান্তর হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক জানান, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন রয়েছে এমন জাহাজ কেনা হচ্ছে। তাতে কম সময়ে বিএসসির বহর সমৃদ্ধ হচ্ছে। নতুন আরো যে তিনটি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেগুলোও নির্মাণাধীন অবস্থায় কেনা হবে। আশা করা যায় আগামী জানুয়ারির মধ্যে ওসব জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত হবে।