সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অবৈধ পাথর উত্তোলন ও লুটপাটের ঘটনায় এবার প্রকাশ্য অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের জানান, আগের এনফোর্সমেন্ট অভিযানের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, “প্রকাশ্য অনুসন্ধান করা হচ্ছে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য। যাদের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান চালানো হবে।”
এর আগে, গত ১৩ আগস্ট দুদকের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে একটি দল সাদাপাথর পরিদর্শন করে। পরে ১৬ আগস্ট জমা দেওয়া প্রতিবেদনে অবৈধ উত্তোলনে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ট্রাকে অবৈধভাবে প্রায় ৫০০ ঘনফুট পাথর লোড করা হতো, যার বাজারমূল্য পরিবহন ব্যয় বাদে প্রায় ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা ভাগ হতো পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য, আর বাকি অর্থ বণ্টন করত উত্তোলনকারীরা। একইভাবে প্রতিটি বারকি নৌকা থেকে আদায় করা হতো এক হাজার টাকা—যার অর্ধেক যেত পুলিশে এবং অর্ধেক প্রশাসনের পকেটে। এ ছাড়া থানার ওসি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত কমিশন নিতেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে মোট ৫৩ জনের সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসে। এতে বলা হয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ লুটপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত।
এমন প্রেক্ষাপটে দুদকের প্রকাশ্য অনুসন্ধান শুরু করাকে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল। তাদের মতে, দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হলে এ অনুসন্ধান কঠোরভাবে পরিচালনা করতে হবে।
এদিকে, একই দিনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তাবিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আগারগাঁওয়ে সাংবাদিকদের জানান, সংশোধনীতে বেশ কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে—আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামিরা আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না; একক প্রার্থী থাকলেও সরাসরি বিজয়ী ঘোষণা না করে তাকে ‘না ভোট’-এর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে; নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে; পোস্টার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে; আর প্রিজাইডিং অফিসারকে ভোটকেন্দ্রে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ইভিএম পুরোপুরি বাতিল করে পোস্টাল ব্যালট চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে প্রবাসী, সরকারি কাজে বাইরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী, কারাবন্দি বা হেফাজতে থাকা ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। সাংবাদিকদেরও ভোটগণনার সময় কেন্দ্রের ভেতরে থাকার অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
ইসি আশা করছে, এসব পরিবর্তন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও গ্রহণযোগ্য করবে। আইন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই তা কার্যকর হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।