নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে মিনা আক্তার তিশা (৩৩) নামে এক নারীর ওপর নির্যাতনের মামলায় ফারুক শেখকে (৫২) গ্রেফতার করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ২য় আসামি মাহমুদা বেগম।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ফারুক শেখকে গ্রেফতার করা হয়। ফারুক শেখ বাঘরা এলাকার মৃত শেখ ওহাব আলীর ছেলে। ২য় আসামি নজরুল পাঠানের স্ত্রী মাহমুদা বেগম (৪৬) তিনি এখনো দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুলিশের নাকের ডগায়।
নির্যাতনের শিকার ও মামলার বাদী মিনা আক্তার তিশার অভিযোগ, আমার স্বামী ফারুক শেখ দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত সৌদি আরব থাকে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের ১২ তারিখে পারিবারিক ভাবে ফারুক শেখের সাথে আমার বিবাহ হয়। আমার বিবাহের পূর্বে তিনি আরেকটি বিবাহ করেছিলেন। তার পুর্বের সেই স্ত্রীর ঘরের ০২ জন মেয়ে ছিলো ওই মেয়ে দুটি কে আমি লালন পালন করে বিয়ে দিয়েছি। তার দুইটি মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি কখনো সন্তানাদি নেই নাই।
আমি স্বামী ও মেয়েদের নিয়ে শ্রীনগর ০৪ নং ওয়ার্ড জমজম টাওয়ারের পিছনে সিঙ্গাপুর গার্ডেন, হোল্ডিং নং- ৩৫০/১ এর ৫ তলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটে বসবাস করতাম।
আমি আমার স্বামীর সংসার ও তার দুই মেয়ে কে নিয়ে জীবন যাপন করে আসছি। আমার বিবাহের সময় ফারুক শেখ কে যৌতুক হিসেবে আমার পিত্রালয় থেকে নগদ ০৫ লক্ষ টাকা প্রদান করি।
আমার স্বামী অনুমানিক ৩/৪ বছর পরপর ছুটিতে বাড়িতে আসতো। এসেই কয়েক দিন থাকার পরই আমাকে আমাদের বাড়ি থেকে আরো ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করিয়া আমার উপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করিতে থাকতো। আমি ভবিষ্যত সুখ শান্তির কথা চিন্তা করে তার সকল নির্যাতন সহ্য করে সংসার করিতে থাকি।
আমার স্বামী আমার অজ্ঞাতসারে পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে আমার ফ্লাটের ২য় তলার নজরুল পাঠানের স্ত্রী ও মত্তগ্রাম এর মোবারক শেখ এর মেয়ে মাহমুদা বেগম (৪৬) এর সাথে। আমি বিষয়টি জানতে পেরে মাহমুদার স্বামী কে একাধিক বার বলে ও কোন লাভ হয়নি উল্টো তার সহযোগীতায় আমার স্বামীর জমানো টাকা ও সম্পদ ভোগ করার কৌশল অবলম্বন করে। এবং আমার স্বামীকে উস্কানি দিয়ে আমার উপর নির্যাতন করায়।
এরমধ্যে আমার স্বামী পরকিয়া সম্পর্কের কারণে ০২ বছরে মোট ০৪ বার বাংলাদেশে আসে এবং আমার অজান্তে অর্থলোভী ও বেশ্যাই ৩ সন্তানের জননী মাহমুদা বেগম কে নিয়া বিভিন্ন রিসোর্ট ও আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। আমি জানতে পারলে তাকে এই বিষয়ে কিছু বলিলে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ সহ মারপিট করে এবং সিগারেটের আগুন দিয়ে আমার হাত সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দিয়া শরীর ঝলসে দেয়।
সর্বশেষ গত ০২ সেপ্টেম্বর দুপুর অনুমান ১২টার সময় আমার স্বামী সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এসে বাসায় আসে। আসার পর হইতেই মাহমুদা কে নিয়ে বিভিন্ন তারিখ ও বিভিন্ন সময়ে আমার ফ্ল্যাটে এসে একত্রে শারীরিক মেলামেশা করে। এবং ১১ সেপ্টেম্বর বেলা অনুমান ১১ টার সময় আমার স্বামী আমার ছোট ভাই অটোগাড়ী চালক ইব্রাহিম মৃধা (৩৬) কে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে তাকে ডেকে এনে আমার ভাইয়ের অটোগাড়ী যোগে লৌহজং থানাধীন মাওয়া রিসোর্টের ২০২ নম্বর আবাসিক রুমে অবস্থান করিয়া শারীরিক মেলামেশা করে। সেখান থেকে এসেই আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয় এবং বলে আমাকে আজকের মধ্যেই ১০ লক্ষ টাকা এনে দিবি। আমি নির্যাতনের মাত্রা সইতে না পেরে আমার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী এবং আমার এক বেয়াইকে জানালে তারা ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ০৭টার সময় আমার স্বামীর সাথে এই বিষয়ে কথাবার্তা বলতে আমার ফ্ল্যাটে আসে এবং তার সাথে কথাবার্তা বলিলে তাদের সামনেও আমার কাছে পুনরায় ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে কিংবা আমার নামে থাকা ফ্ল্যাট লিখে দিতে বলে। অন্যথায় আমাকে তালাক দেওয়ার হুমকী প্রদান করেন। তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমার ভাই ,ভাবী ও বেয়াই চলে গেলে তার পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর রাত অনুমান ০১.৩০ টার সময় তার পরকিয়া নারী মাহমুদাকে তাহার ফ্ল্যাট থেকে নিয়ে আমার ফ্ল্যাটের ভিতর আসে এবং মাহমুদার কু-পরামর্শে আমার স্বামী আমার নিকট ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে অথবা আমার নামে থাকা উক্ত ফ্ল্যাটটি তার নামে লিখে দিতে বলে। আমি যৌতুকের টাকা দিতে এবং ফ্ল্যাটটি তার নামে লিখে দিতে অস্বীকার করিলে আমার স্বামী তার হাতে থাকা জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে মাহমুদার সহায়তায় আমার দুই হাতের বাহুতে, গলার নিচের উভয় পাশে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাক্যা দিয়া ঝলসে দিয়ে ফোসকা পরায়। এবং আমাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে আমাকে রুমের ভিতর আটকে রেখে তারা রঙ্গ লিলায় আসক্ত হয়। পরদিন সকালে আমার স্বামী আমার ছোট ভাইকে ফোন করে আমাকে নিয়ে যেতে বলিলে আমার ছোট ভাই এবং ভাবী উক্ত ফ্ল্যাটে আসিয়া আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করিয়া শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়া চিকিৎসা করায়। আমি চিকিৎসা শেষে শ্রীনগর থানায় গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করি যাহার মামলা নং ১৮ মামলায় ১নং আসামি ফারুক শেখ কে ওই রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ এবং ২ নং আসামি মাহমুদা বেগম বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়ালেও পুলিশ তাকে এখন ও গ্রেফতার করতে পারেনি।
এই বিষয়ে ভূক্তভোগী নারী আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলেন, আমি নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছি অতিদ্রুত বাকি আসামিকে গ্রেফতার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।