এম জাফরান হারুন::
পটুয়াখালীর গলাচিপায় মাছ চুরির অভিযোগ তুলে দুই শিশুকে হাত-পা বেঁধে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে চরবিশ্বাস ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাসান সরদারের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরমহিরউদ্দিন এলাকায় ওয়াপদা নতুন সুলিজে। ভুক্তভোগী শিশুরা আবদুল্লাহ (১০), মির্জাগঞ্জ উপজেলার মহিষকাটা এলাকার কাশেম হাওলাদারের ছেলে। অপর শিশু সাব্বির (১৪), চরবিশ্বাস চরআগস্তি এলাকার হারুন প্যাদার ছেলে।
আবদুল্লাহ গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায় দুই শিশুকে হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের হাতে দুইটি ইলিশ মাছ।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহর নানা শাহজাহান প্যাদা (৬০) বিচার চেয়ে গলাচিপা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার রাতে স্থানীয় জেলে জয়নাল খাঁর নির্দেশে নতুন সুলিজে নৌকায় করে নদীতে মাছ ধরতে যায় আবদুল্লাহ ও সাব্বির। পরে সুলিজ ঘাটে তারা নৌকায় রাত্রিযাপন করে। পরদিন সকালে ইমরান ও কাইয়ুম প্যাদা দুই শিশুকে ধরে নতুন সুলিজ বাজারে নিয়ে আসে। সেখানে ইমরান বয়াতির গদির ১০ পিস ইলিশ মাছ চুরির অভিযোগ তুলে দুই শিশুকে লাঠি দিয়ে পেটায় ইউপি সদস্য হাসান। পরে হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে সূর্যের দিকে তাক করিয়ে রাখা হয় এবং হাতে মাছ দিয়ে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
আবদুল্লাহর নানা শাহজাহান প্যাদা বলেন, সোমবার সকাল ৮টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি নাতি ও আরেক শিশুকে হাত-পা বেঁধে রৌদ্রে শুইয়ে রেখেছে। তাদের হাতে মাছ দিয়ে ছবি তুলছে। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেয় ইউপি সদস্য হাসান সরদার। পরে ১০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা দাবি করে। আমি গরিব মানুষ বলে অনুরোধ করলে আমাকে ৫ হাজার টাকা দিতে বলে। আমি ১০ দিন সময় চাইলে তারা সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে আমাদের ছেড়ে দেয়। বাসায় এসে দেখি নাতির দুই পা ফুলে কালো হয়ে গেছে। এভাবে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার নাতি ছোট থেকে আমার কাছে বড় হয়েছে। তার দুই বছর বয়সের সময় বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে অনেক কষ্ট করে তাকে বড় করছি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এ ঘটনার বিচার চাইতে ও সাংবাদিকদের জানানোর কারণে অভিযুক্ত হাসান সরদার ও তার সহযোগীরা বর্তমানে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে।
শিশু আবদুল্লাহ বলেন, রাতে আমরা নৌকায় ঘুমায় ছিলাম। সকালে আমাদের নৌকা থেকে ধরে নিয়ে যায় বাজারে। সেখানে নিয়ে হাত-পা বেঁধে আমাকে মারধর করেছে হাসান সরদার। পরে রাস্তায় বসিয়ে হাতে মাছ দিয়ে ছবি তুলছে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য হাসান সরদার বলেন, ওদের কাউকে মারধর করা হয়নি। ইমরানের গদির ১০ পিচ ইলিশ মাছ চুরির অভিযোগে দুইজনকে ধরে আনলে আমিও ছিলাম সেখানে। শিশুর স্বজনদের মাছের টাকা দিয়ে দিতে বলি। কিন্তু তাদের কাছে টাকা ছিল না তাই সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখা হয়েছে। দুইজনকে ১০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করি।
মাছ ব্যবসায়ী ইমরান বয়াতি বলেন, রাতে গদি থেকে মাছ চুরি করছে। এজন্য দু’জনকে ধরে আনছি। তারা দৌড়ে পালিয়ে যাবে তাই হাত-পা বেঁধে রাখছি। আর চোর তাই গদির মাছ হাতে দিয়ে ছবি তোলা হয়েছে। তাদের পুলিশে না দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এরকম চুরি তারা আরও করছে স্থানীয়ভাবে সালিসি করা হয় সব সময়।
এ বিষয়ে গলাচিপা থানার ওসি আশাদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।