
নৌপথে বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নৌযানের চালক ও শ্রমিকরা। মেঘনা থেকে পদ্মা, শীতলক্ষ্যা হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীপথ পর্যন্ত বিস্তৃত এই চাঁদাবাজি মূলত পণ্যবাহী নৌযানকে লক্ষ্য করেই পরিচালিত হচ্ছে। নৌযান শ্রমিকদের অভিযোগ—চাঁদাবাজদের চাহিদামতো টাকা না দিলেই তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। দিনের বেলা ও রাতের অন্ধকারে নোঙর করা নৌযানে হামলা চালিয়ে চাঁদা আদায় করা হলেও বেশির ভাগ ঘটনারই মামলা হয় না। ফলে অপরাধীরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নৌপথে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করেই সংঘবদ্ধ চক্রগুলো চাঁদাবাজি করছে। সদরঘাট, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে তারা সক্রিয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করা দেড় হাজারেরও বেশি মালবাহী জাহাজ এবং হাজারো বাল্কহেড প্রতিনিয়ত এসব চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে।
চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ষাটনল, চরভৈরবী, মল্লিকপুর, ইলিশা ও দড়রচর এলাকায় সকল ধরনের নৌযানকে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়। একইভাবে শরীয়তপুরের চর আত্রা, ওয়াপদা, বাবুরচর, খাজুরতলা ও পাইনপাড়া এলাকায় ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে দুর্বৃত্তরা নৌযান থামিয়ে ২০–৩০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা না দিলে চালক-শ্রমিকদের ওপর চলে মারধর।
এ ছাড়া নরসিংদীর পলাশ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ সীমানা ঘেঁষা শীতলক্ষ্যা নদীপথেও মালবাহী জাহাজ থেকে ১০–৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শ্রমিকদের মারধরসহ মালপত্র লুটের ঘটনা ঘটছে। শীতলক্ষ্যা দিয়ে প্রতিদিন সার, চিনি, জুট, পেপার, সিমেন্টসহ বৃহৎ শিল্পকারখানার কাঁচামাল বহন করা হয়, যা প্রায়ই চাঁদাবাজদের হামলার মুখে পড়ে।
তবে নৌপুলিশ বলছে—অভিযান অব্যাহত আছে। বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজ চক্রের কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বছরের ১১ আগস্ট সিলেটের গোয়াইনঘাটে নৌপথে চাঁদাবাজির মামলায় র্যাব-৯ সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী আজমল হোসেনসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগেও চাঁদপুর মোহনায় চাঁদাবাজি মামলায় একদল দুর্বৃত্ত গ্রেপ্তার হয়।
নৌপুলিশের (ঢাকা অঞ্চল) পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নৌপথে সক্রিয় অপরাধীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চলছে। অভিযোগ পেলেই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারে জোর তৎপরতা চলছে।