দৈনিক ক্রাইম বাংলা গত ২৩ জুন ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। করোনা সংক্রমনের কারণে খুব একটা ঢাকাঢোল না পিটিয়ে সীমিত পরিসরে তাদের ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করেছে। দলটি পর পর টানা তিন বার রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। কাকতালিয় কিনা জানি না, এই ২৩ জুন ১৭৫৮ সালে পলাসীর প্রান্তরে মীরজাফরের বিশ^াসঘাতকতার কারণে নবাব সিরাজুদ্দোলার পতনের সাথে সাথে ভারতীয় উপমহাদেশে স্বাধীনতার সূর্য অস্তামিত গিয়েছিল। আর আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এই দল আওয়ামী লীগের নেত্বত্বেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদ্বয় হয়েছে। দলটি দেশের সবচেয়ে পুরাতন রাজনৈতিক দল।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কে এস দাস লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এ দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। প্রতিষ্ঠার শুরুতে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের মতো প্রথিত যশা নেতারা। মুসিলম শব্দটি বাদ দিয়ে পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারন করলে দলটি আরো বিকাশিত হয়। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন ও ৬৯’র গণঅভূত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের মানুষকে সংগঠিত করে আওয়ামী লীগ। এভাবে ২৪ বছরের সংগ্রামের পরিনতিতে ১৯৭১ সালের রক্তগঙ্গা পাড়ি দেয়া মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ এবং ৯ মাস যুদ্ধের অর্জন লাল-সবুজের পতাকা ও বাংলাদেশ নামক সার্বভৌম একটি দেশ। অর্থ্যাৎ দেশের স্বাধীনতা ও দলটির ইতিহাস অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত।
স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিল। ইতিহাসের জঘন্যতম করুন পরিনতি বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে নিহত হবার পর দলটি ২১ বছর বিরোধী দল থেকে লড়াই-সংগ্রাম মধ্যদিয়ে কাটিয়েছে। অবশেষে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে টানা ১২ বছর দলটি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায়। দীর্ঘ এসময়ে দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকায় আজ প্রশ্ন উঠেছে বঙ্গবন্ধুর দল কি এখন আমলা নির্ভর হয়ে উঠেছে? বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে মুজিব বর্ষ পালনের অনুষ্ঠানে ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে আমলাদের প্রাধান্য দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে করোনার প্রাদুর্ভারে ত্রান কার্যক্রম সমন্বয়ে ৬৪ জেলায় একজন করে সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রেও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন গুরুত্ব দেওয়ায় দলের মধ্যে বিরুপ আলোচনা আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সমালোচিত হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থা অকার্যকর করার অভিযোগে। মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগ। পরে ওই বছরের জুন মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেয়। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি আওয়ামী লীগ। ২০০৯ সালে পরিবর্তনের ডাক এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নিরংকুশ বিজয়ের মাধ্যমে আবার সরকার গঠন করে দলটি। ২০১৪ সালে বিএনপি সহ বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এক তরফা জয় পায়। দেশের ইতিহাসে প্রথম ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় সমলোচনা শুরু হয়। ২০১৮ সালে নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশ নিলেও সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত না হওয়া এবং প্রশাসনের সহায়তায় বিজয়ী হওয়ার অভিযোগ ওঠে। মূলত: ২০১৪ সালের একতরফা জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের নির্বাচনেও বিরোধীদের মাঠ ছাড়া করা, বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হওয়া, ভোটের দিন জবদস্তি, জাল ভোট প্রদান, এসব অনেকটা রীতি হয়ে গেছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। দরিদ্র দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়, বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশে অনেক মেগা প্রজেক্ট। বেড়েছে জিডিপি। তবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে যে সব অভিযোগ উঠেছে, এসব দাবীতে আগে রাজপথে ছিল আওয়ামী লীগ।
You cannot copy content of this page