সম্পাদকীয়ঃ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা চার বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করায় বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকা কক্সবাজারের পরিবেশও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি করেও মিয়ানমার তাদের নিচ্ছে না। আর এখন সেনাশাসনে থাকা দেশটি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করছে। জাতিসংঘকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও মানছে না দেশটি। এদিকে চরম অনিশ্চয়তায় থাকা রোহিঙ্গারা ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, জঙ্গিবাদসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ক্রমেই তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, মানবপাচারসহ এমন কোনো অপরাধমূলক কর্মকা- নেই, যেগুলোতে তারা জড়িয়ে যাচ্ছে না। রোহিঙ্গারা শুধু বাংলাদেশ নয়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশেও আশ্রয় নিয়েছে। এসব কারণে মনে করা হচ্ছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই রোহিঙ্গারা হুমকি হয়ে উঠতে পারে। সেই আশঙ্কাই ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। বৃহস্পতিবার কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে (ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয়) শান্তি ফিরবে না। তিনি আরো বলেন, প্রত্যাবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জাপান মিয়ানমারকে সরাসরি চাপ দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও উচিত মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশের অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকও মনে করেন, রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। আফগানিস্তানের তালেবানদের সঙ্গে কিছু রোহিঙ্গার সম্পৃক্ততার খবর আগেও গণমাধ্যমে এসেছে। তাদের অনেকেই বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের কোনো কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ আছে বলে মনে করা হয়। সম্পর্ক আছে আঞ্চলিক অনেক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও। সম্প্রতি আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোও একই ধরনের আশঙ্কার কথা বলেছে। তদুপরি মিয়ানমারের সেনাশাসকরা যে ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু করেছেন, তাও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার কারণ হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। এবার জাপানের রাষ্ট্রদূত সরাসরি সেই আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন। আমরা আশা করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীন, রাশিয়া, ভারতসহ বিশ্বনেতারা অনুরূপ দৃঢ় অবস্থান নেবেন। জাপানি রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরির ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি মনে করেন, সামরিক সরকারের সময় প্রত্যাবাসন কিছুটা কঠিন হতে পারে। প্রত্যাবাসন সফল করার জন্য প্রবল বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।