ক্রাইম বাংলা ডেক্স বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার আয়তন ৬৬৪ কিলোমিটার, কিন্তু মাছ আহরণ করা হয় মাত্র ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে। এজন্য মাছের বৈশ্বিক উৎপাদনে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। বিষয়টি সামনে রেখে সমুদ্রসীমার মাছ আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গভীর সমুদ্রের উপযোগী মাছ ধরার ট্রলার বা জাহাজ নির্মাণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশী-বিদেশী যৌথ মালিকানায় এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত নীতির সংশোধন জরুরি বলে মনে করেন তারা। গত রোববার এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ‘ব্লু ইকোনমি: সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় এ পরামর্শ জানান বক্তারা। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। এ সময় তিনি বলেন, শুধু মাছ কিংবা খনিজ সম্পদ নয়, নিজস্ব সমুদ্রসীমা ব্যবহার করে পাল্টে দেয়া যেতে পারে দেশের পুরো অর্থনীতির চিত্র। সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন, জাহাজ শিল্প, গভীর সাগরে মাছ ধরার উপযোগী জাহাজ নির্মাণ, কনটেইনার, ওষুধ, প্রসাধনীসহ নানা শিল্প বিকশিত হতে পারে। খুরশেদ আলম আরো বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা মূল ভূখ-ের ৮১ ভাগের সমান। পুরো বিশ্বে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে দেড় লাখ জাহাজ চলাচল করে, সেখানে বাংলাদেশের জাহাজ মাত্র ৭০টি। অথচ এ পথে পণ্য পরিবহনের অর্থনীতির আকার ৯০০ কোটি ডলার। এ ছাড়া ৭৪ শতাংশ কনটেইনার ব্যবহার হয় এশিয়া অঞ্চলে। প্রতি বছর ১৫ শতাংশ হারে বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে কনটেইনারের চাহিদা আরো বাড়বে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি সমুদ্রবন্দর থাকলেও তা মাদার ভেসেলের জন্য উপযোগী নয়। এমন অবস্থায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে তা সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সহায়তা করবে। সালমান এফ রহমান বলেন, সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনাময় খাত। এ খাত থেকে আগামী কয়েক বছরেই ১০০ বিলিয়ন ডলার রফতানি করা সম্ভব। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রের উপযোগী মাছ ধরার ট্রলার বা জাহাজ নির্মাণে দেশী-বিদেশী যৌথ মালিকানায় উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত নীতির সংশোধন জরুরি। এ ছাড়া জাহাজ শিল্পের অগ্রগতি কেন ধীর হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ও নীতি কৌশল ঠিক করতে এফবিসিসিআই ও বিডাকে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সমুদ্র অর্থনীতি। কর্মশালায় আলোচিত বিষয়গুলোর সমন্বয়ে এ খাতের কর্মকৌশল নির্ধারণে সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেবে এফবিসিসিআই। কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ড. একে এনামুল হক, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি এমএ মোমেন, মো. আমিনুল হক শামীম, মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দিন আলমগীর ও মো. হাবীব উল্লাহ ডন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
You cannot copy content of this page