সম্পাদকীয় ডেস্কঃ রাজধানীর ন’টি স্থানে একযোগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানব বন্ধন ও আলোচনা সভার মাধ্যমে ন’ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস-২০২১ পালন করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে দুর্নীতির অভিযোগ করতেন তা কমে গেছে। সেই সাথে কমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের নিজস্ব অভিযানও। অন্যদিকে দুর্নীতির নতুন অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করার চেয়ে পুরনো অভিযোগ অনুসন্ধান তদন্ত ও অভিযোগ পত্র চূড়ান্ত করতেই এখন ব্যস্ত দুর্নীতি দমন কমিশন। যদিও আলোচিত বেসিক ব্যাংক, হল মার্ক ও স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত বছরের পর বছর ঝুলে আছে। এক হিসেবে দেখা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৩২২টি। যা মোট অনুসন্ধান ও মামলার এক চতুর্থাংশ মাত্র।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনে মোট ১১ হাজার ৮২৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। অর্থাৎ মাসে জমা পড়েছে গড়ে ১ হাজার ১৮৩টি অভিযোগ। ২০২০ সালে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৪৮৯ টি। মাসে গড়ে জমা পড়েছিল ১ হাজার ৫৪১টি অভিযোগ। অন্যদিকে ২০২০ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৪৮৭ টি অভিযান পরিচালনা করেছিল। আর চলতি বছর প্রথম ১০ মাসে করেছে ১১১টি। দুর্নীতি দমন কমিশনের বিধি অনুযায়ী; সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করার নিদেৃশনা রয়েছে। তবে যুক্তিসংগত কারণে আরো ৩০ দিন সময় নেয়া যেতে পারে। তদন্তের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা ১৮০ দিন। তবে তা ৯০ দিন বাড়ানো যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দুর্নীতি দমন কমিশন সেই নিয়মনীতি মানছে না। অবশ্য এজন্য লোক বলের সমস্যা থাকতে পারে। তাছাড়া বিগত দু’বছর করোনার কারণে সব ক্ষেত্রেই স্থবিরতা বিরাজ করেছে। কাজেই দুর্নীতি দমন কমিশনও এর বাইরে নয়।
দেশের উচ্চতর আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্তে বছরের পর বছর শেষ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছ। এক মামলার পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনা ও বিচারকাজ শেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের সহায়তা করা উচিৎ। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলেই দুর্নীতি ও দুর্নীতি চর্চা নির্মূল হবে।
দেশে উন্নয়নের মাহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে, মানুষের জীবন যাত্রার মান বাড়ছে। সেই সাথে দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে আঙুল ফুলে কলাগাছ হবার খবরও বাড়ছে। বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। পাচার হচ্ছে টাকা বিভিন্ন দেশে। কাজেই দেশে সুশাসনের মাধ্যমে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে লাভের গুড় পিপড়ায় খায় প্রবাদের মতোই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে যাবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দুর্নীতি মুক্ত পরিবেশ। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনকে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিযোগ তদন্ত করে সুষ্ঠ বিচারের আওতায় সংশ্লিষ্টদের এনে দেশে আইনে শাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে হবে। শুধু দিবস পালন নয়, প্রতিদিনই সোচ্চার হতে হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশ ও জাতির স্বার্থে। এজন্য দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। প্রতিজ্ঞা করতে হবে, নিজে দুর্নীতি করবো না