সম্পাদকীয় মানুষের অত্যন্ত মৌলিক একটি প্রয়োজন হলো ওষুধ। নির্ভেজাল ওষুধ প্রাপ্তি সবার কাম্য। অনুমোদনহীন বা নিবন্ধনহীন ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি। নামিদামি ওষুধ কোম্পানির জনপ্রিয় ওষুধও নকল করে বাজারজাত করছে একটি চক্র। ওষুধকেই মানুষের প্রাণঘাতী করে তোলা হচ্ছে। এই ভয়ংকর প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না কিছুতেই। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এসব ভেজাল ও অবৈধ ওষুধের নাম অনেক চিকিৎসকও নাকি তাঁদের ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন।
অথচ ব্যবস্থাপত্র বা প্রেসক্রিপশনে অনুমোদনহীন ওষুধ লিখলে এক বছরের কারাদ- বা এক লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ের বিধান রেখে বাংলাদেশ ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
জানা যায়, বাংলাদেশে নকল ও ভেজাল ওষুধ কী পরিমাণে তৈরি হয় তার কোনো নির্দিষ্ট তথ্য সম্ভবত নেই। নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করার কাজে অনেক কম্পানিও জড়িত। নানা ধরনের সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল নকল হচ্ছে। এর পাশাপাশি আছে নিম্নমানের ওষুধ তৈরির কারবার। অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী দাদনের মতো করে ওষুধ প্রস্তুতকারী কম্পানিকে আগাম টাকা দিয়ে ভেজাল ওষুধ তৈরি করেন। সরল বিশ্বাসে ওষুধ কিনে প্রতারিত হয় ক্রেতা। বাজারে ভেজাল ও মানহীন ওষুধের ছড়াছড়িÑসংবাদপত্রে এমন খবর প্রায়ই থাকে। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এমন অনেক ওষুধ ধরাও পড়ে।
রোগ থেকে বাঁচার জন্য মানুষকে প্রতিদিন ওষুধ কিনতে হয়। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ মানুষকে রোগ থেকে মুক্তি তো দেয়ই না, বরং মৃত্যু ত্বরান্বিত করে। তাই সমাজের সচেতন অংশ এসব ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।
শুধু চিকিৎসক কিংবা বিক্রেতাদের শাস্তি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। সরকার এসব নকল, ভেজাল ও অবৈধ ওষুধের উৎপাদক ও বাজারজাতকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনবে এটাই প্রত্যাশা।
আমাদের দেশে ওষুধের বিপণন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা আছে। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধের ক্রয়-বিক্রয় হয়। অনেক চিকিৎসক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফলে এখানে এক বিপজ্জনক চিকিৎসা-সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
আমাদের দেশের ওষুধশিল্প অনেক উন্নতি লাভ করেছে। মানসম্মত ওষুধ পাওয়া মানুষের অধিকার। আর সে কারণে বিপণননীতির দিকে সরকারের একটু নজর দেওয়া দরকার। ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী ও বিপণনকারী সমান অপরাধী। একই সঙ্গে অনুমোদনহীন ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখলে চিকিৎসকদেরও কঠোর শাস্তির