বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা পাওয়া নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সরকারি চিকিৎসা সুবিধা এখনো গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে। এক্স-রে মেশিনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতিগুলো রহস্যজনক কারণে অকেজো হয়ে থাকে। এসব পরীক্ষা থেকে শুরু করে ছোটখাটো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও রোগীকে দৌড়াতে হয় চড়া মূল্যের বেসরকারি ক্লিনিকে। সম্প্রতি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমন একটি চিত্রই ফুটে উঠেছে। জানা যায়, গত বছরের আগস্ট মাসে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন আসে। সেপ্টেম্বর মাসে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা শাহজাদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের নিচতলায় সুরক্ষিত অবস্থায় মেশিনটি বসানো হয়। শুধু একজন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান না থাকায় মেশিনটি আর চালানো সম্ভব হয়নি। আধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি বাক্স থেকে এখন ঘরবন্দি হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু সমাধান হয়নি। শাহজাদপুর উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রমণের প্রবণতা রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক জরিপ বলছে, ২০২১ সালে এ উপজেলায় এক হাজার ১০০ জন নতুন যক্ষ্মা রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় সাড়ে সাত লাখ লোকের বসবাস। তাঁতশিল্প অধ্যুষিত এই উপজেলায় শ্রমিকদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যক্ষ্মাসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এ এলাকার মানুষ। যক্ষ্মা চিকিৎসায় এক্স-রে গুরুত্বপূর্ণ। বাধ্য হয়েই এলাকার মানুষকে বাইরে গিয়ে এক্স-রে করাতে হয়। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকদের আন্তরিকতার বেশ অভাব আছে। প্রায়ই তাঁরা হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকেন। জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ছুটতে হয় শহরে। শহরের বড় বড় হাসপাতালে রয়েছে দালালচক্র। উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি চালু না থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি। সরকারি চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতার কারণে তারা বাধ্য হয় ক্লিনিকের নামে পরিচালিত এসব অনৈতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যেতে। সেখানে উপযুক্ত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও তাদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এটি স্পষ্ট যে, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের মতো অনেক কেন্দ্রেই আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহৃত হচ্ছে না।
You cannot copy content of this page