বৈশ্বিক মহামারি করোনার দাপট আবার বেড়েছে। বাংলাদেশেও এর ঢেউ লেগেছে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্তের কথা জানায় সরকার। করোনার ডেলটা ভেরিয়েন্টের দাপটে গত বছর মাঝামাঝি বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী সনাক্ত ও সনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে করোনার গণ-টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে সংক্রমণ কমতে থাকে। গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম কয়েক সপ্তাহ করোনায় সনাক্তের হার ১ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য কিছু দিন থেকে আবারো সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার আবারো করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে টিকা গ্রহণসহ কিছু সামাজিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে আবারো লক-ডাউনের মতো ব্যবস্থা নিতে হতে পারে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন।
এখন মাস্ক-ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। গণ-পরিবহনে আগের মতো অর্ধেক আসনে যাতায়াত করতে হবে। তবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। হোটেল, রেস্তোরায় খেতে হলে মাস্ক পরে যেতে হবে এবং টিকা কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। মাস্ক ছাড়া গেলে দোকান মালিক ও যিনি যাবেন উভয়কেই জরিমানা দিতে হবে। দোকান খোলা রাখার সময় সীমা রাত ১০ টার পরিবর্তে ৮ টা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করা যায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিস্থিতি অবনতি হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
করোনার নতুন ধরণ অমিক্রন এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। অতিদ্রুত সংক্রমণ সক্ষম অমিক্রন বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ে ফেরত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দু’সদস্যের অমিক্রন সনাক্ত হয়। এরপর আরো কয়েকজনের শরীরে অমিক্রনের সংক্রমণ দেখা যায়। প্রতিবেশী দেশ ভারতে অমিক্রন ছাড়িয়ে পড়েছে। এর বিস্তার রুখতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি থেকে পশ্চিম বঙ্গের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে মানুষের চলাচলে। সে কারণে বাংলাদেশ সীমান্তের বন্দরগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে এবং কোয়ারেন্টাইনের সময় পুলিশি প্রহরা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য সরকার নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে ইপিআই কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে টিকা দান কর্মসূচি চালু করেছে। টিকার পাশাপাশি গনসচেতনাও আবশ্যক। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এলে দেশের মানুষজন মাস্ক ব্যবহার পরিহার করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখে ইচ্ছে মতো চলাচল করছে। এতে অমিক্রন সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। তাই নিজেকে নিরাপদ রাখার তাগিদে আবারো স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাচল করা জরুরি হয়ে উঠেছে। নইলে করোনায় মৃত্যু, নতুন রোগী ও পরীক্ষার বিপরীতে রোগী সনাক্তের হার বাড়তেই থাকবে। জীবন বাঁচাতে জীবন সাজাতে তাই সচেতনতার বিকল্প নেই।
বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় একথা বলা ভুল হবে না যে, করোনা শুধু মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ করেনি, সাথে দেশের সিংহভাগ মানুষের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে দিয়েছে। বিভীষিকাময় সে দিনগুলো আমরা আর দেখতে চাই না। সুস্থ সবল দেহে জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে। তাই আত্মসচেতনতা জরুরি।