কেন্দ্রটিতে গোলাবর্ষণে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, এমন আশঙ্কার মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে আইএইএ। ইউক্রেইনের জাপোরিজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রতিবেদন দিতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। গোলাবর্ষণে দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার একদিন পর মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন দিতে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানটি। কেন্দ্রটিতে গোলাবর্ষণে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, এমন আশঙ্কার মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে আইএইএ, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইউরোপের সবচেয়ে বড় এ পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছে গোলা ছুড়ে তেজস্ক্রিয় বিপর্যয়ের শঙ্কা বাড়ানোর জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেইন একে অপরকে দায় দিচ্ছে। গত সোমবার কেন্দ্রটির বৈদ্যুতিক লাইনে বিঘœ ঘটেছে এবং এর একমাত্র সচল চুল্লিটি অফলাইনে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেইনীয় বাহিনী যখন তাদের পাল্টা আক্রমণ জোরদার করছে, যুদ্ধের শুরুর দিকেই রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন প্রদেশের একটি শহরে কিইভবাহিনী জাতীয় পতাকা তুলেছে, সেসময়ই জাপোরিজিয়ার বিদ্যুৎ সংযোগ ফের বিচ্ছিন্ন হওয়ার এ ঘটনা ঘটল। ইউক্রেইনের কাছ থেকে আসা তথ্যের বরাত দিয়ে আইএইএ জানিয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রটির ব্যাকআপ বৈদ্যুতিক লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। তবে লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং শিগগিরই সংযোগ পুনর্স্থাপিত হবে। পারমাণবিক শক্তি বিষয়ক জাতিসংঘের এ ওয়াচডগ জানিয়েছে, বাইরের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হলেও কেন্দ্রটি চালু রাখার জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আছে, ব্যাকআপ পাওয়ার পুনর্স্থাপিত হলে এই বিদ্যুৎ ফের গ্রিডে সংযুক্ত করা যাবে। গত সোমবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আইএইএ-র প্রতিনিধিদের উপস্থিতি কমতে কমতে দুই কর্মীতে এসে ঠেকেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। সংস্থাটির প্রধান রাফায়েল গ্রসি মঙ্গলবার এই কেন্দ্রসহ ইউক্রেইন বিষয়ক একটি প্রতিবেদন দেবেন এবং পরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে পুরো পরিস্থিতি অবহিত করবেন বলে জানিয়েছে আইএইএ। ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার ‘তেজস্ক্রিয় বিপর্যয়’ সন্নিকটে বলে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, গোলাবর্ষণই বলছে ‘আইএইএ কী বলবে, তা নিয়ে মোটেই ভাবছে না রাশিয়া’। জ্বালানি নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে মস্কোর যে বাধাবাধি চলছে, তার সঙ্গে পারমাণবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া, জার্মানিতে গ্যাস পাঠানোর মূল পাইপলাইন বন্ধ রাখায় ইউরোপজুড়ে সোমবার গ্যাসের দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে; মহাদেশজুড়ে আসন্ন শীত কী ভয়াবহ হবে, তা নিয়ে আতঙ্কও সৃষ্টি হচ্ছে। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণেই নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকঠাক মতো করা যাচ্ছে না, সে কারণেই গ্যাস সরবরাহে বিঘœ ঘটছে বলে দাবি রাশিয়ার। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ করার পর শনিবার ওই পাইপলাইনটি খুলে দেওয়ার কথা ছিল মস্কোর। কিন্তু এখন তারা বলছে, পাইপে একটি ফুটো পাওয়ায় লাইনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে, ওই ফুটো দিয়ে তেল চুইয়ে পড়ছে। পাইপলাইনটির পরিচালনাকারী কোম্পানি গ্যাজপ্রমের উপপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভিতালি মারকেলভ মঙ্গলবার রয়টার্সকে বলেছেন, সিমেন্স এনার্জি ত্রুটিপূর্ণ উপকরণ না সারিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ ফের চালু হবে না। শনিবার সিমেন্স এনার্জি বলেছিল, ত্রুটি সারানোর কাজ তাদের করার কথা নয় আর গ্যাজপ্রম যে ফুটোর কথা বলছে, তাতে পাইপলাইনের কার্যক্রমে প্রভাব পড়ার কথা না। সরবরাহ ঠিক রাখতে একতাবদ্ধ হওয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে। এদিকে রাশিয়ার জ্বালানিমন্ত্রী নিকোলাই শুলগিনভ মঙ্গলবার ভ্লাদিওভস্তকের ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে বলেছেন, রাশিয়ার তেলের মূল্যসীমা বেধে দেওয়ার যে প্রস্তাব পশ্চিমারাকরতে যাচ্ছে, তার পাল্টায় রাশিয়া এশিয়ায় আরও তেল পাঠানো শুরু করবে।
কয়েকদিন আগে জি-৭ এর অর্থমন্ত্রীরা ইউক্রেইনে রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে তাদের জ্বালানির দামের মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হন। এমন কিছু হলে রাশিয়াও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলে  গত সোমবার সতর্ক করেছে ক্রেমলিন। গত সোমবার সন্ধ্যায় রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের ক্রিভোরিজস্কি জেলার একটি তেলের ডিপো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেইনের জরুরি বিভাগ। একইদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়াকে ‘সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার রাষ্ট্র’ তকমা দেওয়া ঠিক হবে না। রাশিয়াকে এই তালিকায় ফেলতে ইউক্রেইন দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনের ওপর চাপ দিয়ে আসছিল; তবে এমন কিছু হলে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক যে পুরোপুরি টুটে যাবে, সে ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল মস্কো। এদিকে সোমবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউক্রেইনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানোর সক্ষমতা কমে আসায় মস্কো এখন উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে কামানের গোলা কিনছে।