অনলাইন ডেস্ক।।
ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা যানজট। প্রতি দুই ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট রাস্তায় বসে থাকতে হচ্ছে। এতে জ্বালানি পুড়ছে, সময় অপচয় হচ্ছে। সর্বোপরি উৎপাদনশীলতা নষ্ট হচ্ছে। আর বায়ুদূষণের ফলে মানুষ স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার চিকিৎসায় একজন মানুষকে বছরে চার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘সবুজ নগরীর জন্য দূষণ কমানো’ শীর্ষক সংলাপের মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্র উপস্থাপনা করেন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, সড়ক তৈরিতে প্রধানমন্ত্রীকে ধোঁকা দিয়ে ফাইল পাস করে গাছ কাটা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এখন বুঝে গেছেন। কোনো ফাইল এলেই সেই প্রকল্পে গাছ কাটা হচ্ছে কি না, পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে ফাইল পাস করেন। পরিবেশসম্মত নয়, এমন অনেক ফাইল তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের আইন অনেক আছে, কিন্তু আইন বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ নেই। এটি শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। শ্রদ্ধাশীল না হলে আমাদের অনেক মত ও পথ থাকলেও লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। পরিবেশের উন্নয়নে আগে ব্যক্তি মানুষকে সচেতন হতে হবে। ব্যক্তি মানুষ সচেতন না হলে গোলটেবিলে পরিবেশ রক্ষার কথা বলে বাসায় গিয়ে পরিবেশ দূষণে পলিথিন ব্যবহার করবে। সচেতন না হলে আইন দিয়ে পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করা যাবে না, ব্যবহার বন্ধ হবে না। এ থেকে সৃষ্ট পরিবেশেরও ক্ষতি রোধ করা যাবে না, যোগ করেন উপমন্ত্রী। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে বটে, কিন্তু তা হচ্ছে পরিবেশকে ধ্বংস করে। পরিবেশ না বাঁচিয়ে উন্নয়ন করলে সে উন্নয়ন টেকসই হবে না। পরিবেশ দূষণের প্রধান দুটি উৎস হলো বায়ু ও পলিথিন। এ ছাড়া নির্মাণ, যানবাহন, শিল্প, ইটের ভাঁটা থেকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ঘরের বাইরে ভেতরে দুই পর্যায়েই এ ক্ষতি হচ্ছে। ঘরের ভেতরে ইলেকট্রনিক পণ্য, ফ্রিজ, ফ্যান, এমনকি বাজারে ব্যবহৃত পলিথিন ঘরে এসে পরিবেশের ক্ষতি করছে। এ ক্ষতি মারাত্মকভাবে শিশুদেরও ওপরও পড়ছে। এ ক্ষতি থেকে আইনি পদক্ষেপ যেমন দরকার, আবার সচেতনতাও দরকার। পরিবেশ রক্ষায় সিপিডির সুপারিশগুলো হলো- ইটের ভাঁটা ও কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটের ভাঁটা তুলে দেওয়া। সরকার ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে, সেগুলো নতুন করে চালু না হয়। কয়লা থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রণোদনা দেওয়া। যারা প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা। কর বাড়িয়ে প্লাস্টিক কারখানাকে নিরুৎসাহিত করলে জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। প্লাস্টিক পণ্য বাদ দিয়ে বিকল্প পরিবেশসম্মত কাগজ বা কাপড়ের পণ্য উৎপাদন করতে চাইলে তাদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়া। প্রয়োজনে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া। যে পরিবেশের দূষণ করবে, তাকে আর্থিক দণ্ড দিতে হবে। আর্থিকসহ আরও যেসব শাস্তির অধীনে আনা যায়, সেগুলো নিশ্চিত করা। পরিবেশ সহায়ক নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভর্তুকি বাড়ানো। এ সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালাগুলো হালনাগাদ করা। আইন প্রয়োগ করতে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোকে শক্তিশালী করা; জবাবদিহি সৃষ্টি করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।