দৈনিক ক্রাইম বাংলাঃ সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহরুন রুনি হত্যা মামলায় নতুন করে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। মামলার আসামিরা মুখ খুলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহত পরিবারের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
শিশির মনির বলেন, “জেলে থাকা আসামিরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে মুখ খুলেছেন। অতীতে তদন্ত প্রক্রিয়ায় আইনিভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তবে এখন তদন্ত দ্রুত এগোচ্ছে এবং আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকারের আমলে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স মামলাটির তদন্ত করছে। টাস্কফোর্সের সদস্যরা মামলার বাদী, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন।
তদন্তে বাধার ইতিহাস উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, “আগের সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তদন্তে বাধা দেওয়া হতো। এ কারণেই ১৩ বছরেও মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। তবে এখন তদন্তে নতুন গতি এসেছে।”
এদিকে, মেহরুন রুনির ভাই নওশের রোমান অভিযোগ করেন, “সাগর-রুনি হত্যায় শেখ হাসিনা সরকার জড়িত।” তবে নিহত দম্পতির সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “এবার আশার আলো দেখছি। আশা করি, ভালো কিছু হবে।”
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহরুন রুনি। ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা হয়নি। এ পর্যন্ত চার বার তদন্ত সংস্থা বদল হয়েছে। পুলিশ, ডিবি, র্যাবের পর এখন তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত নভেম্বর থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে পিবিআই প্রধানের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠিত হয়। টাস্কফোর্সের তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে এর আগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১১৫ বার সময় নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও পিবিআই তা জমা দিতে পারেনি। আদালত পরবর্তী তারিখ ২ মার্চ নির্ধারণ করেছেন।
মামলাটির দীর্ঘসূত্রতা ও তদন্তে বাধার ইতিহাস নিয়ে সমাজে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। অনেকেই আশা করছেন, টাস্কফোর্সের তদন্তে এবার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে।