সুইটি আক্তার মাদারীপুর।।
মাদারীপুর জেলায় অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বিভিন্ন নদ-নদী থেকে বালু উত্তোলন। প্রশাসন থেকে ক্রমাগত অভিযান পরিচালনা করে এবং বালুখেকোদের জেল-জরিমানা করেও থামানো যাচ্ছে না বালু উত্তোলনের দৌরাত্ব। বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এবং ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ মানুষের প্রশ্ন; অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছে, তারা কি প্রশাসনের চেয়েও শক্তিশালী? জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান পদ্মা নদীর অংশ, আড়িয়ালখাঁ, কুমার, নিম্মকুমার, ময়নাকাটা, পালরদি, বিলপদ্মাসহ ছোট-বড় নদ-নদীতে দিনেরাতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
এই অবৈধ ড্রেজারের কবল থেকে বাদ পড়ছে না, বাওড়ের ফসলি জমিও। গত কয়েক বছর ধরে শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া, বাহাদুরপুর, বন্দরখোলা ও পাঁচ্চর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ বাওড়ের ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থরা বাঁধা দিতে গেলে তাদের উপর চড়াও হয় বালুখেকোরা। প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কোন সুফল পাচ্ছে না ভূক্তভোগিরা।দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে বালু উত্তোলন।এদিকে অর্ধশত ড্রেজার বালু উত্তোলনের কাজে সক্রিয় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রেজার দিয়ে উত্তোলনকৃত বালু বাল্কহেড দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয় এ সকল বালু। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় পদ্মার এই বালু এবং মাটি। নতুন জেগে ওঠা চর ফসল উৎপাদনের উপযোগী হলেও বালুখেকোদের কবলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে ফসলি জমি। অভিযোগ রয়েছে, চরে চাষ করা ফসলসহ জমির মাটি কেটে বিক্রি করে থাকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও তেমন কোনো প্রতিকার হয়নি বলেও জানা গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ও পাঁচ্চর ইউনিয়নের সাদিপুর হতেবটতলা বাহাদুরপুর পর্যন্ত দত্তপাড়ার ৬,৭,৮ এবং ৯নং ওয়ার্ডের ২২ চরবাচামারা ফসলি বাওড়ে গত ৩ বছর ধরে অসাধু ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যত্রতত্র ড্রেজার বসিয়ে দিন রাত বালু উত্তোলন করছে। এছাড়াও বন্দরখোলা বাওড়, নিম্নভূমির জলাশয়ে এবং চরবাচামারা স্লুইসগেটের উত্তরপাশে মোল্লাবাড়ি ও গিয়াস তালুকদারের বাড়ির পাশে বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি আশপাশের মানুষের ঘরবাড়ি পড়েছে হুমকির মুখে।
এলাকার ভূক্তভোগী মো: সামসুল হক মিয়া অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে গত বছর এবং চলতি বছর ১৯জানুয়ারি শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে গত ২ ফেব্র“য়ারি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত আবেদন করেন।
এদিকে ৪ ফেব্রুয়ারি শিবচর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নিকট বালু উত্তোলন বন্ধে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শিবচর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ যৌথ অভিযানে নামে।
বন্দরখোলা ফসলি বাওড় থেকে বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্থ মো: সামসুল হক মিয়া বলেন, ‘প্রশাসন ইচ্ছে করলে কঠোরভাবে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ করে মানুষের ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি রক্ষা করতে পারে। মাঝে মধ্যে দুই একটি অভিযান চালিয়ে কিছু মানুষকে আটক করে অর্থদণ্ড করে ছেড়ে দেয়। এতে তাদের সাহস আরো বেড়ে যায় এবং বালুদস্যুরা জরিমানা দিয়ে দুই-একদিন বন্ধ রেখে পূণরায় পুরোদমে দিনরাত বালু উত্তোলন শুরু করে। আমাদের প্রশ্ন তাহলে কি অবৈধ বালু উত্তোলনকারিরা প্রশাসনের চেয়েও শক্তিশালী?’
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: রতন শেখ পিপিএম বলেন,৫ ফেব্র“য়ারি শিবচর থানার পুলিশ এবং শিবচর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট) বাহাদুরপুর বালুমহলে যৌথ অভিযান চালিয়ে ৪জনকে আটক করি। পরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট) ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৪জনের মধ্যে ২জনকে ১লাখ ৮০হাজার টাকা জরিমানা করেন একজনকে ৭দিনের সাজা দিয়েছেন।’
ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক শিবচর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট) শাইখা সুলতানা বলেন, ‘আটকৃতদের ৪ জনের মধ্যে একজন ১লাখ টাকা, একজনকে ৮০হাজার টাকা জরিমানা ও ৭দিনের জেল দেয়া হয়েছে। বাকী ২জনকে শ্রমিক বিবেচনায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’