সুইটি আক্তার মাদারীপুর।।
৮০ বছরের বৃদ্ধ দাদার নাতির জন্য, আর্তনাদ ওঠো দাদা, দাদা একটু কথা কও- আমার কাছে আসো।দাদার আর্তনাদে পুরো গ্রামে নেমেছে যেন শোকের ছায়া। মাটিতে শোয়ানো ২ বছরের শিশু ইমতিয়াজের মৃত্যু দেহের দিকে তাকিয়ে পাগলপ্রায় বৃদ্ধ দাদা।মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের বেপারীকান্দি গ্রামে।মাদারীপুর সদর উপজেলা খোয়াজপুর ইউনিয়নের বেপারীকান্দি এলাকায়, মায়ের পরকীয়ার বলি হলো ২বছরের ইমতিয়াজ নামে এক শিশু। ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়,সদর উপজেলার খোয়াজপুরের ইউনিয়নের বেপারীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মালোশিয়ার প্রবাসী দবির ব্যাপারীর সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। একই ইউনিয়নের মঠের বাজার চৌকিদার বাড়ির সিরাজ চৌকিদারের মেয়ে শারমিন আক্তারের। ৫ বছরের ছামি ও ২ বছরের ইমতিয়াজ দুই ছেলেকে নিয়ে ভালই চলছিল তাদের সংসার। দুই বছর আগে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ও স্ত্রী সন্তানকে সুখে রাখতে পাঁ রাখে মালয়েশিয়ায়। তার পর থেকে ভালই চলছিল শারমিনের সংসার। ৬/৮ মাস আগে শারমিনের ভাইকে বিদেশ পাঠানোর জন্য স্থানীয় দালাল আমির বেপারীর সাথে যোগাযোগ করেন। তাকে ভাইর পাসপোর্ট ও বেশ কিছু টাকা দেয় শারমিন। আমির সম্পর্কে শারমিনের চাচা শ্বশুর হয়। ভাইয়ের বিষয়ে কথা বলতে বলতে বিবাহিত আমিরের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে শারমিন।
শ্বশুর বাড়ির পরিবারের লোকেরা বাধা দিলে তিনি ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য আমিরের সাথে কথা বলেন এবং এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে নিষেধ করে দেয়। আমিরের সাথে মাদারীপুর ঘুরে বেড়ানো সহ এমনকি মাঝে মাঝে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে ঢাকা গিয়ে দু’একদিনে কাটিয়ে আসতেন। গত ২ মাস আগে দুই ছেলেকে নিয়ে শারমিন শরীয়তপুর খালার বাড়ি যায়। সেখানে বড় ছেলে ছামিকে রেখে ২ বছরের ইমতিয়াজকে নিয়ে আমিরের সাথে চলে যায়।বিষয়টি শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানতে পারলে শারমিনের খালার বাড়ি থেকে বড় ছেলে ছামিকে নিয়ে আসে। ১৪ এপ্রিল বিকেলে ঢাকা থেকে ফোন করে জানায় ইমতিয়াজ মারা গেছে। এরপর রাত ২টার দিকে মৃত ছেলেকে নিয়ে শশুরবাড়ি হাজির হয় শারমিন। সেখানে ইমতিয়াজের মারা যাওয়ার বিষয়ে একেক সময় একেক কথা বলতে থাকে। এলোমেলো কথাবার্তা শুনে এলাকার লোকের সন্দেহ হলে মাদারীপুর থানায় খবর দিলে মাদারীপুর সদর থানার পুলিশ ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য, মাদারীপুর সদর ২৫০ হাসপাতালে পাঠায়। এদিকে আমির ও শারমিনের পরিবারের লোকজন বাড়িতে তালা দিয়ে সবাই পালিয়ে যায়।
শারমিনের বড় ছেলে ছামি জানায়,মা আমাদের নিয়ে আমিরের সাথে যখন ঢাকায় যেত তখন, মা হোটোলের বাথরুমে মধে মোবাইল হাতে দিয়ে ২ ছেলেকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখতো। ছেলে ছামির দাবি তার মা’ই ছোট ভাইকে মেরে ফেলেছে।
বাড়িতে উপস্থিত স্থানীয় সবারই দাবি আমির ও শারমিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
মৃত ইমতিয়াজের চাচি সালমা বলেন, শারমিন আমিরের সাথে পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা ছামিকে খালার বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। পরে শারমিনের কাছ থেকে ইমতিয়াজকেও আনার চেষ্টা করি। কিন্তু সবাই বলেছে ইমতিয়াজ ছোট হওয়ায় মায়ের কাছ থেকে তাকে আনার কোন আইন নাই। তাই আমরা আনতে পারি নাই। যদি আমাদের কাছে আনতে পারতাম তাহলে ইমতিয়াজকে এভাবে মরতে হতো না। আমরা আমির ও শারমিনের ফাঁসি চাই।
মাদারীপুর সদর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদিল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থান গিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। শিশুটির মা শারমিন আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখনো শিশু ইমতিয়াজ এর মা ঘাতক শারমিন এর বিরুদ্ধে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করে না-ই।অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করিব।