বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখনই জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের সারবত্তা ও অন্তর্নিহিত শক্তি তুলে ধরতেই জাতিসংঘ এই দিনকে গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি। আহতদের প্রতি সমবেদনা ও গণতন্ত্রকামী মানুষদের অভিনন্দনও জানান তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করে। তার কালজয়ী দর্শনের কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও বহুদলীয় গণতন্ত্র। মানবিক মর্যাদা, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যই ছিল প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি। খালেদা জিয়া সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়েছিলেন, তবে এজন্য তাকে বারবার স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণ মোকাবিলা করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র বারবার আঘাত হেনেছে। রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা, জাল ভোটার দিয়ে নির্বাচন আয়োজন করা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা—এসবই ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কৌশল ছিল। বিশেষ করে গত দেড় দশকে আওয়ামী সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনে গণতন্ত্রকে বন্দি রাখা হয়েছে এবং বিরোধী কণ্ঠকে নির্দয়ভাবে দমন করা হয়েছে।
তারেক রহমান এ প্রসঙ্গে এবারের আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের প্রতিপাদ্যও তুলে ধরেন—“অ্যাচিভিং জেন্ডার ইকুইলিটি অ্যাকশন বাই অ্যাকশন”। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ বা যেকোনো লিঙ্গের মানুষের সমান সুযোগ ও মর্যাদা নিশ্চিত করাই গণতন্ত্রের মৌলিক শর্ত। গণতান্ত্রিক সমাজে কেউ বঞ্চনার শিকার হলে প্রতিবাদের পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।
তিনি মনে করিয়ে দেন, গণতন্ত্র হলো একটি সর্বজনীন মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক পদ্ধতি। জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিসর নির্ধারণে স্বাধীন ইচ্ছা ও পূর্ণ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই প্রকৃত গণতন্ত্র গড়ে ওঠে। গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট স্বৈরতন্ত্রের পতন প্রমাণ করেছে যে, গণতন্ত্রকে রুদ্ধ রাখা যায় না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর নির্ভর করছে। এজন্য জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের মূলনীতিগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগই হতে হবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ভিত্তি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ইনশাআল্লাহ একদিন বাংলাদেশ এমন এক রাষ্ট্রে পরিণত হবে যেখানে থাকবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি, স্বনির্ভরতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও ন্যায়পরায়ণ সমাজ।