বাজেট নিয়ে আলোচনা এখন দূর্নীতির রোজনামচা হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে। বিরোধী দল তো বটেই, মহাজোটের শরীক দলগুলো এমন কি সরকার দলীয় সংসদরাও দূর্নীতি ও টাকা পাচার নিয়ে কথা বলছেন। যদিও সরকার দলীয় কেউ কেউ বলছেন দেশে এখন দূর্নীতি সর্বগ্রাসী নয়। দেশ ও জনগনের উন্নয়নে যারা ভিতো, তারাই দূর্নীতির অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখছেন না, কাজ না হলে দূর্নীতি করবে কোথায়? কাজ হচ্ছে বলেই তো দূর্নীতির ধুয়া উঠছে। বিরোধীদলীয় সদস্যরা সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলছেন, প্রায় সব মন্ত্রনালয় ও প্রতিষ্ঠান দূর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। করোনা পরিস্থিতি দেশের আর্থসামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ক্রুটি বিচ্যুতি উন্মোচিত করেছে।
গত ৬ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে সরকার দলীয় একজন সাংসদ বলেছিলেন, দূর্নীতি ও টাকা পাচার বন্ধ না হওয়ায় লজ্জায়, ঘৃনায় মাথা হেট হয়ে যায়। অন্যদিকে ১৪ জুন বাজেট আলোচনার প্রথম দিন মহাজোট সরকারের শরিক ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক খবরদারি ও দূর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মহাজোটের অপর শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুও সংসদে সেচ্চার দূর্নীতি নিয়ে। তিনি গত ১৫ জুন বলেন, বরাদ্ধকৃত অর্থ ব্যয়, প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন সব ক্ষেত্রেই দূর্নীতিবাজ লুটেরা সিন্ডিকেট বিদ্যমান। সরকারের সামগ্রিক কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। চিহ্নিত দূর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। কালোটাকা বাজেয়াপ্ত, অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে। সম্প্রতি একটি রাডার ক্রয় প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ: তুলে তিনি বলেন, ১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা দিয়ে রাডার কেনার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই রাডার কেনা হয়েছে মাত্র ৬৩০ কোটি টাকায়। কারা এই টাকা লুটপাট করে খাওয়ার আয়োজন করেছিলো? হাতের পর হাত, ঘাটের পর ঘাট ঘুরে প্রধান মন্ত্রীর কাছে যাবার পর চুরির ঘটনা ধরা পড়লো।
মহাজোট থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টি বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দলের সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশে টাকা পাচারকারীদের নামের তালিকা দেয়ার জন্য। নাম আমরা দেবো কেন, আপনার নানা এজেন্সি ও সংস্থা আছে, তাদের কাছ থেকে আপনি নামের তালিকা নিতেই পারেন। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষনা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টোগ্রিটির প্রতিবেদন বলছে, গড়ে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়, যা প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। সংস্থাটির তথ্য মতে গত পাঁচ বছরে বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ২৪টি। যার ৬শ ৭৭টি ঘটেছে ২০১৭-১৮ সালে। এরপর ২০১৮-১৯ সালের ৫২টি এবং ২০১৯-২০ সালে ১শ ১৬টি। সর্বগ্রাসী দূর্নীতি, লুটপাটের কারনে বাজেটে যেটুকু বরাদ্দ হয় সেটুকুর উপকারও জনগনের কাছে পৌঁছায় না। কাজেই বাজেট যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দূর্নীতিমুক্ত প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সারাদেশে দূর্নীতিগ্রস্থ তার দলের মন্ত্রী, সাংসদ ও নেতা কর্মীদের কারনে কথার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দূর্নীতির সর্বগ্রাসী ব্যক্তিরা নিজেদের আখের গোটাতেই ব্যস্ত। তাই সময় এসেছে দূর্নীতি এবং টাকা পাচার রোধে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া ও তা বাস্তবায়ন করা। তা না হলে আজ দেশে যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে তাতে ভাটা পড়বে। তাতে হয়তো ব্যক্তির উন্নতি হবে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সিংঙ্গাপুর থেকে তারেক কোকোর পাচার করা টাকা ফিরত আনা সম্ভব হয়, তবে অন্যদেরটা সম্ভব নয় কেন? যে কোন অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে সত্য উন্মোচন করতে হবে। কোনটি কথার কথা বা কোনটি বাস্তব ঘটনা তা তদন্ত না করলে কি করে জানা যাবে?