সম্পাদকীয় ডেস্ক সর্বনাশা মাদক দেশের তরুণসমাজের একটি অংশকে টেনে নিয়ে গেছে অন্ধকারের পথে। প্রতিদিনই নতুন করে অসংখ্য কিশোর-তরুণ এই মাদকের ফাঁদে পা রাখছে। বিশেষ করে করোনাকালে এই প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে। মাদকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে মাদকের অর্থ জোগাড় করতে কিশোর ও তরুণদের অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠার উদাহরণও আছে। মাদক সরবরাহে বাহক হিসেবে স্কুলপড়ুয়া কিশোরী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনেক তরুণী ও নারীকে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। গণমাধ্যমে অতীতে প্রকাশিত খবরে বারবারই বলা হয়েছে ইয়াবা বাণিজ্যের গডফাদাররা ঢাকায় বসেই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। ইয়াবা বাণিজ্যের উৎস মিয়ানমার। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসে ইয়াবার চালান। তারপর অসংখ্য ছোট ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সেগুলো পৌঁছে যেত দেশের আনাচে-কানাচে। সর্বনাশা মাদক যাতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সদা তৎপর। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে ক্রমেই গতি পেয়েছে মাদকবিরোধী অভিযান। ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে মাদকের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। কারবারিরা নতুন কৌশলে নতুন ধরনের মাদকদ্রব্যের কারবার শুরু করলেও কঠোর নজরদারিতে তা ধরা পড়ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন প্রণয়ন, ডোপ টেস্ট চালুসহ বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।
মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। অন্যদিকে মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে চলতে থাকলে সমাজ ক্রমেই পুঙ্গ হয়ে যাবে, সব উন্নয়নপ্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ক্রমেই ভয়ংকর পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে মাদকের প্রায় সবটাই আসে বাইরে থেকে অবৈধপথে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমেই কঠোরভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। মাদকের কারবার বন্ধ করা না গেলে সামাজিক-অর্থনৈতিক সব ধরনের স্থিতিই বিঘিœত হবে। মাদকের বিস্তার রোধে কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু মাঠ পর্যায়ে মাদকের খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে নয়, মাদকের মূলহোতা তথা গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারীকারী মাদক ব্যবসায়ীরা রাজনীতিক, প্রশাসনিক ক্ষমতাকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা অসাধু কিছু কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিচালনায় মাদক ব্যবসা ও মাদকের ব্যবহার দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ যখন বাস্তবতা, সেখানে সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে কেবল সাঁড়াশি অভিযান, মাদক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি না। ক্ষণিকের ভীতি সৃষ্টি হচ্ছে মাত্র। গডফাদাররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে ক্রুর হাসি হেসে যাবার সুযোগ পাচ্ছে এবং সরকারের প্রচেষ্টাকে উপহাস হিসেবে বিবেচনা করছে। আমরা মনে করি, মাদকের শিকড়-বাকড় তুলতে প্রয়োজন মাদকের মূলহোতা বা গডফাদারের প্রতিহত করা। মাদকের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন থামাতে এর কোনো বিকল্পও নেই। সব ধরনের মাদক প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যম মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর যেকোনো অভিযানে তারা সহযোগিতা করবে।
You cannot copy content of this page