সম্পাদকীয়ঃ বৈশ্বয়িক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশে ক্রমেই কমে এলেও গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সনাক্ত ও মৃত্যু দুই-ই বেড়েছে। নয় জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন রোগী সনাক্ত হয়েছে ২৭৮ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছিল আর নতুন রোগী সনাক্ত হয়েছিল ২৩২ জন। কাজেই সংক্রমণের মাত্রা কখন বাড়বে আর কখন কমবে তা কারো জানা নাই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করার কোনো বিকল্প নেই। সাথে প্রতিশোধক দু’ডোজ টিকা গ্রহণ করে সবাইকে নিরাপদ করতে হবে নিজেদেরকে। সরকার দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চেষ্টা করছে। তবে টিকা দানের ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশের দুই কোটি দু’লাখের বেশি মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। এ নিয়ে ১২ শতাংশ মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছে।
টিকা গ্রহণের জন্য এ পর্যন্ত ৫ কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার ৭৪৬ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৮ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ২ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৩ জন। এ পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে প্রায় সাড়ে সাত কোটি ডোজ। গত ১০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চলতি মাসে তিন কোটির বেশি টিকা আসবে। নভেম্বরে আসবে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টিকা। ডিসেম্বরে আসবে পাঁচ কোটি। আর জানুয়ারিতে আসবে পৌনে চার কোটি টিকা। অর্থাৎ জানুয়ারির মধ্যে কম বেশি ১৬ কোটি টিকা আসবে।
শুধু প্রাপ্ত বয়স্থ নয়; শিশু কিশোরদেরও টিকা দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। আসলে করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে আমরা একটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় আসমা টিকা দানে পিছিয়ে পড়েছি। বিকল্প টিকার উৎস থেকে সংগ্রহের জন্য আমরা দেরিতে যোগাযোগ করায় এক সংগে বেশি টিকা আমরা পাচ্ছি না। দুই ডোজ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শুধু প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। দুই দিন আগে ভারত একশ কোটি ডোজ টিকা দিয়েছে। বিশ্ব গণমাধ্যম এটা খুব বড় করে দেখছে। এর আগে একশ কোটি ডোজ টিকা দিয়েছিল চীন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের ২১ শতাংশ জনগোষ্ঠী পূর্ণ দুই ডোজ টিকার আওতায় এসেছে। কোভিড-১৯ ট্রাস্কফোর্স বলছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পূর্ণ দুই ডোজ টিকা দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভুটান। দেশটির ৬৮ শতাংশ মানুষের পূর্ণ দুই ডোজ টিকা পেয়েছে। এরপর ৬৪ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দিয়ে এগিয়ে আছে মালদ্বীপ। সবচেয়ে পেছনে রয়েছে মিয়ানমার। সেখানে মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়েছে।
বাংলাদেশে টিকা পাওয়ার জটিলতার কারণে টিকা দানে একটু পিছিয়ে আছে। এখানে কিছু টিকা এসেছে উপহার হিসেবে কিছু পেয়েছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। আর কিছু টিকা কিনেছে। এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, সিনোফার্মা ও মর্ডানা-এ চার ধরনের টিকা দেওয়া হচ্ছে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বলছে দ্রুত টিকা সংগ্রহ করে দেশের সিংহভাগ মানুষকে টিকার আরতায় নিয়ে আসতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। সচেতনতার সাথে টিকা দিয়ে সবাইকে নিরাপদ করতে হবে।