এম.জাফরান হারুন, , পটুয়াখালী:: নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় পটুয়াখালীর বাউফলে সাংবাদিক এবং নৌকা সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেই চলছে। বাড়ি ঘর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নৌকার পক্ষে কাজ সহ ভোট দেওয়া ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের ৫শতাধিক কর্মী-সর্মথক। যেন নাজিরপুরে চলছে ৭১ এর পাকিস্তানি নির্মম নারকীয় বর্বরতা।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ও বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর ) রাতভর নাজিরপুর-তাঁতেরকাঠি ইউপি উপ-নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এস এম মহসিনের সমর্থকরা এ নারকীয় হামলা চালায় বলে অভিযোগ করছেন নৌকার পক্ষের মাঠে কাজ করা কর্মী ও সমর্থকরা।
নৌকার কর্মী ও সমর্থকরা জানান, মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ও বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর ) নাজিরপুর-তাঁতেরকাঠি ইউপি উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬৫ ভোটে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. ইব্রাহিম ফারুককে হারিয়ে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (চশমা) এসএম মহসিন। রাত ৬টার দিকে ফলাফল ঘোষণার পর থেকে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ৭১ এর মতো পাকিস্তানি নারকীয় নির্মম তাণ্ডব শুরু হয়। এ দুই রাতে আওয়ামী লীগের অফিসসহ ২৬/২৭ টা নৌকার কর্মী ও সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, নাজিরপুর ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. আনসার উদ্দিন খানের ঘর ভাংচুর করা হয়েছে। কোপানো হয়েছে তার ঘরের চারপাশের টিনের বেড়া। রেহাই পায়নি রান্না ঘরের হাড়ি-পাতিলও।
কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি রিয়াদুল ইসলাম বাবুর ঘর-দুয়ার সহ একটি মোটর সাইকেল কুপিয়ে পিটিয়ে ভাংচুর করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর ) সকাল ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের নিজ তাঁতেরকাঠি গ্রামের হিন্দু পাড়ায় হামলা চালিয়ে কুপিয়ে পিটিয়ে ঘর-দুয়ার ভাংচুর করা হয়।
হামলার শিকার কল্পনা রাণী (৪০) বলেন, শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার অপরাধে আমাদের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। তিনটি ঘর কুপিয়ে পিটিয়ে ভাংচুর সহ লুট করা হয়েছে। এবং আগামী চার বছরের জন্য এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে গেছে। এলাকা না ছাড়লে ঘর বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিবে।
নমিতা রাণী (৩০) বলেন, নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে আমার স্বামী পলাতক। শিশু সন্তান নিয়ে ভয়ের মধ্যে দিন কাটছে।
নৌকার একাধিক কর্মী সমর্থক বলেন, আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আমরা মঙ্গলবার রাত থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছি, যেতে পারছিনা বাড়ি ঘরে। আমাদের অনেকেই পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে যেতে পারছি না।
বাউফল প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক জি এম ফোরকান বলেন, আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে আমার বসতঘর তছনছ হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বিএনপি, জামাত, শিবিরের সমর্থন ও ভোটে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এস.এম মহসিন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে তার কাঁধে ভর করে বিএনপি জামাতের লোকজন আওয়ামী লীগ নিধনে মাঠে নেমেছে। অসংখ্য আওয়ামী লীগ কর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও প্রশাসন কোন কার্যকারী ভূমিকা নিচ্ছে না।
এদিকে নৌকার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা, বাড়ি ঘর ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেন সদ্য বিজয়ী নাজিরপুর তাঁতেরকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম মহসিন।
এবিষয়ে বাউফল থানার ওসি মো. আল-মামুন বলেন, আমি নিজে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
You cannot copy content of this page