দৈনিক ক্রাইম বাংলাঃ
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব লক্ষ করা যায় আমাদের দেশে। একটি দেশের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে সে দেশের স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, কার্যক্রম ও বৈশিষ্ট্যের ওপর। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী একটি জনগোষ্ঠীই পারে দেশের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে। জনস্বাস্থ্যের ইতিহাসে ১৯৭৮ একটি গুরুত্বপূর্ণ সাল। সেবছর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমানে কাজাখস্তানের রাজধানী আলমা-আতায় (বর্তমান নাম আলমাতি) ১৩৪টি রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতাদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তারা একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন, যা ‘আলমা-আতা ঘোষণা’ নামে পরিচিত এবং এর ভিত্তিতেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ধারণা বিশ্বে প্রবর্তিত হয়। অনেকের হয়তো ‘২০০০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য’-এ স্লোগানটির কথা মনে আছে। এটিও সেই আলমা-আতা ঘোষণা থেকেই উৎসারিত হয়। ঘোষণাটি এবং সম্মেলনটি এ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ যে, এর মাধ্যমেই বিশ্বপরিসরে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্যকে ক্রয়যোগ্য সেবার বিপরীতে এক সর্বজনীন অধিকার হিসাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবা কি শুধুই চিকিৎসা ওষুধ? স্বাস্থ্যসেবা বলতে মানুষকে সুস্থ রাখার আয়োজনকেই বোঝাতে হবে। রোগ যেন না হয় সেই কাজ করাটা স্বাস্থ্যসেবার আসল কথা। আর যদি রোগ হয়েই যায়, খুবই দ্রুত চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যেতে হবে। যত দেরি ততই সমস্যা বাড়তে থাকবে। এ জন্যই হাতের কাছে থাকতে হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যেখানে জরুরি স্বাস্থ্যসেবাও থাকবে। মানুষকে সুস্থ রাখার আয়োজন আর রোগীর চিকিৎসার আয়োজন এককথা নয়। রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে হাসপাতালভিত্তিক, যেখানে একজন অসুস্থ মানুষকে একক ধরে সব ব্যবস্থা করতে হয়। আর মানুষকে সুস্থ রাখতে, মানুষকে রোগ থেকে দূরে রাখতে যে ব্যবস্থা নিতে হয়, সেটা সমাজকে একক ধরে করতে হয়। একটা জনগোষ্ঠীর মাঝে যদি নিরাপদ ও সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়, সেটা করতে হয় একটা নির্দিষ্ট জনপদকে একক ধরেই। বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে যদি খেলার মাঠের আয়োজন করতে হয়, সেটা করতে হবে পাড়া-মহল্লাকে একক ধরেই। ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ থাকতে যদি বাড়ির ভেতরে ও বাইরে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হয়, সেটা সামষ্টিকভাবে পাড়া-মহল্লাকে একক ধরেই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উন্নয়নের সাথে সাথে জনসচেতনার উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায়, অতীতের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ষড়যন্ত্রের গ্যাঁড়াকল থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত এবং মেডিকেল ট্যুরিজমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও সরকারের বাজেট এবং স্বাস্থ্য পরিকল্পনা খুবই জরুরি