
গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশ অনুমোদন: সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, বিচার শেষ করতে হবে ১২০ দিনে
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা | ৬ নভেম্বর ২০২৫
(দৈনিক ক্রাইম বাংলা)
দেশে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে উপদেষ্টা পরিষদ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর।
অধ্যাদেশে গুমকে চলমান অপরাধ (Continuing Offense) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের ৪৭তম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে আরও দুটি বিষয় অনুমোদিত হয়—
জাতীয় লজিস্টিক নীতি ২০২৫
২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকা।
তবে জাতীয় নগরনীতি নিয়ে আলোচনা হলেও তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
—
“গুমের রাজত্ব আর চলবে না” — প্রেস সচিব
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বলেন,
> “এই আইন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় তৈরি করবে। ভবিষ্যতে কোনো সরকার বা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা আর দেশে গুমের রাজত্ব চালাতে পারবে না। কোনো গোপন আটক কেন্দ্র বা ‘আয়নাঘর’ আর তৈরি হবে না।”
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, গোপন আটক কেন্দ্র স্থাপন বা ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গুমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর দণ্ডের পাশাপাশি ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের স্পষ্ট বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া, গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে, যা অভিযোগ গঠনের পর ১২০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে বাধ্য থাকবে।
—
অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তে ক্ষমতা পাবে মানবাধিকার কমিশন
অধ্যাদেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম-সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত ও সুপারিশ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ভুক্তভোগী, তথ্যদাতা ও সাক্ষীর নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা নিশ্চিতে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
একই সঙ্গে, গুম-সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর জন্য একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার ও বিশেষ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা ভুক্তভোগী পরিবারের পুনর্বাসন ও সহায়তায় ব্যবহৃত হবে।
—
পটভূমি ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড
প্রেস সচিব জানান, আগের সরকারের সময়ে দেশে গুমের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছিল। গঠিত গুম কমিশনে প্রায় ২ হাজার অভিযোগ এসেছে, তবে সদস্যদের হিসাবে প্রকৃত সংখ্যা ৪ হাজারেরও বেশি হতে পারে।
তিনি বলেন,
> “বাংলাদেশে অনেক মানুষ আছেন, যারা নিখোঁজ হওয়ার পর আর ফেরেননি। আবার কেউ কেউ ফিরে এসেছেন। বিএনপির অনেক কর্মী এখনও নিখোঁজ। এই বাস্তবতাই আইনটিকে জরুরি করে তুলেছে।”
অধ্যাদেশটি প্রণয়নে আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ গত বছরের ২৯ আগস্ট জাতিসংঘের ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’-এ যোগ দেয়।
সেই কনভেনশনের নীতিমালার আলোকে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব।
—
অতিরিক্ত সিদ্ধান্তসমূহ
বৈঠকে দেশের সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে জাতীয় লজিস্টিক নীতি অনুমোদন পেয়েছে।
এছাড়া ২০২৬ সালের সরকারি ছুটির তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে জাতীয় নগরনীতি নিয়ে আলোচনায় ঐকমত্য হলেও পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য আবার উপস্থাপন করা হবে।
—
সারসংক্ষেপ
অধ্যাদেশে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
বিচার শেষ করতে হবে ১২০ দিনের মধ্যে
মানবাধিকার কমিশন পাবে অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা
গোপন আটক কেন্দ্র স্থাপন শাস্তিযোগ্য অপরাধ
ভুক্তভোগীর জন্য তহবিল ও সুরক্ষা কাঠামো
আইনটি প্রণীত জাতিসংঘ কনভেনশন অনুসারে