• সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নৈরাজ্যের আশঙ্কায় গণতন্ত্র রক্ষায় সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের,,, আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়: সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি,, বিশ্বের একমাত্র স্বৈরশাসক নেত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা – মেজর হাফিজ/দৈনিক ক্রাইম বাংলা।। নির্বাচনের আগেই গণভোট বাতিল ও তিন উপদেষ্টার অপসারণ দাবি ৮ দলের,,,, দেশের সব সমস্যার সমাধান নির্বাচিত সরকারের হাতে—আমীর খসরু,,, বাউফলে এমপি শহিদুল আলম তালুকদারের নির্দেশে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করলেন সহধর্মিণী/দৈনিক ক্রাইম বাংলা।। কুরআন প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ বাউফল মদিনাতুল উলূম নুরানি হাফেজি ক্যাডেট মাদ্রাসা/দৈনিক ক্রাইম বাংলা।। নবগঠিত কমিটির পরিচিতি ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা,,, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার কোনো লকডাউন বাংলাদেশে চলবে না”— বাউফলে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের ঘোষণা/দৈনিক ক্রাইম বাংলা।। প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষরিত সনদ নিজেই লঙ্ঘন করেছেন: সালাহউদ্দিন আহমদ,,,

দুইবার ‘বাবা’ বলে নিথর হয়ে যায় ৬ বছরের জাবির ইব্রাহিম,,,,দৈনিক ক্রাইম বাংলা

রিপোর্টার: / ৫৩ পঠিত
আপডেট: শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশ ও চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের অমর একুশে বইমেলা শুরু ১৭ ডিসেম্বর রাকসু-চাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক মতভি ছেলে দুইবার বাবা ডাক দিয়ে নিথর হয়ে গেল। ৬ বছর আড়াই মাসের জাবির ইব্রাহিম। গত মে মাসের ১৯ তারিখ ছিল আমার কলিজার টুকরার ৭ম জন্মদিন। আর কোনদিন রঙিন বেলুন আর কেক কাটা নিয়ে আনন্দে মেতে উঠবে না সে।

বেঁচে থাকলে জাবিরের বয়স সাত বছর পার হতো। তিনভাইয়ের যৌথ পরিবারের বারোতম সন্তানটা হারিয়ে গেল ঘাতকের বুলেটের আঘাতে। এই কয়মাসে পরিবারের অনেকের জন্মদিন এসেছে,সবার মন খারাপ হয়ে যায়। কারণ কারো জন্মদিন হলেই প্রথম কেক কাটতে পছন্দ করতো জাবির।

 

জাবিরের বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, যে তিনজন ছোট শিশু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হয়েছে, তাদের মধ্যে জাবির একজন।

২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরায় জন্মগ্রহণ করে। বড়বোন জুমাইনা কবির নেহা(২২) ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে পড়ছে, মেঝোভাই জুহায়ের মাহতাব আবদুল্লাহ উত্তরার দক্ষিণ খানের প্রেম বাগানের কে. সি. মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

তিন ভাই বোনের মধ্যে জাবির ছিল সবার ছোট। এবছর জানুয়ারি মাসে প্রথমবারের মতো ভর্তি হয়েছিল একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ইংরেজি ও গণিতের প্রতি ছিল তার প্রবল ঝোঁক। স্কুল থেকে ফিরে বাসায় এসেই স্কুলে কী কী ইংরেজি শিখেছে তা আওড়াত। মাত্র ছয়মাসের মধ্যেই স্কুলের অনেকের কাছে প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিল সে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির কথা উল্লেখ করে জাবিরের বাবা জানান, ওকে ভর্তি করাতে নিয়ে গেলাম। তার ইন্টারভিউ এতো ভালো হয় যে শিক্ষকরা তাকে প্লেতে না দিয়ে নার্সারীতে ভর্তি করিয়ে দেন।

উত্তরার দক্ষিণখান থানার পশ্চিম মোল্লারটেকের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সোমবার ছিল ফ্যাসীবাদী সরকারের পতনের দিন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার দিন।

এসময় জাবিরের বাবা ও তিনচাচার পরিবারসহ সকলে দুপুর দুইটার দিকে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। সঙ্গে ছিল জাবিরও। উত্তরা আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তর গেটে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় জাবির।

জাবিরের বাবা বলেন, ঘটনার দিনে আমি ওকে হাত ধরে নিয়ে আসছিলাম, এরইমধ্যে পুলিশ জাবিরকে টার্গেট করে গুলি করে হত্যা করে। এসময় আমার হাত ধরে ছিল সে। হাতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে চিৎকার করছিল ।

সবসময় ওর কথা মনে পড়ে, সব স্মৃতিতেই জাবিরকে মনে পড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন,

মৃত্যুর দুদিন আগে ও আমাকে বলেছিল, ‘আমাকে ম্যাথবুক কিনে না দিলে আমি তোমার সঙ্গে দুইদিন কথা বলবো না।’

তিনি বলেন, আমি বাসায় ঢোকার মুখে যখন সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকতাম তখন সেই একমাত্র সবসময় আমার সালামের উত্তর দিত। দোকানে গেলে কোনো জিনিস কেনার ইচ্ছে হলে আগে জানতে চাইত, ‘বাবা তোমার পকেটে টাকা আছে, আমি এটা কিনতে চাই।’

জাবিরের বাবা বলেন, আমার বড় মেয়ে ও ভাতিজি প্রায় প্রতিদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছিল। আন্দোলনকারীদের মাঝে পানি ও সিঙ্গাড়া বিতরণ করত ওরা। আন্দোলন থেকে ফিরে এসে ওরা যখন গল্প করত তখন জাবির তা শুনে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করত।

যেদিন শহীদ হলো তখন একটা হেলমেট পরে আমার কাছে এসে বলল, আমি বড় হয়েছি। আমাকে তোমাদের সাথে নিতে হবে। এরপর সে সবার সাথে রাজপথে গেল।

বেলা ১২ টার সময় আমরা পরিবারের সবাই বের হচ্ছিলাম। ছোট বলে ওকে নিতে চাচ্ছিলাম না। আমার বাবাও নিষেধ করছিল। কিন্তু ওর জেদের কারণে আমরা ওকে নিয়ে লং মার্চে বের হয়েছিলাম। সেসময় কেক, ফুল, চকলেট বিনিময় হচ্ছিল। একটা কাগজে সে লিখেছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ রাস্তায় দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছিল আর সবাইকে তা দেখাচ্ছিল।

 

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জাবিরের মা রোকেয়া বেগম জানান, আমরা সাধারণ মানুষ। আমি কোন দল করি না। আমি তো মা, আমার কোন দল নাই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও দলীয় লোকেরা রাস্তায় বাচ্চাদেরকে যেভাবে মারছিল তা দেখে বুক কেঁপে উঠত। শুধু কান্না করতাম। আজ আমার চোখের পানি শুকিয়ে গেছে; কোল খালি হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, দুপুরের দিকে জাবিরের বড় চাচার পরিবার ও তাদের বাচ্চারা সবাই বের হলে আমিও সন্তানদের নিয়ে বের হই। এর কিছু পরেই আমার চোখের সামনে তার পায়ে গুলি লাগলে সড়কেই লুটিয়ে পড়ে জাবির।

কবির হোসেন বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই

জাবিরকে প্রথমে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়।

ডাক্তাররা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে জাবিরের। ওকে বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন। আমার এবং জাবিরের রক্তের গ্রুপ একই। রক্ত দিতে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায়, এ রক্তের ম্যাচিংসহ নানা পরীক্ষা করার সরঞ্জাম এ হাসপাতালে নেই। দূরের ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে রক্ত নিয়ে আসতে হবে।

এমন অবস্থায় দৌড়াদৌড়ি করতেই প্রায় দুই ঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। জাবিরকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করতে গিয়ে দেখি হাসপাতালের একটা বেডে ওকে শুধুমাত্র অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরে জানতে পারি এ হাসপাতালে শিশুদের আইসিইউ নাই।

তিনি বলেন, ওই হাসপাতালে প্রায় দুইঘণ্টা অতিবাহিত হবার পর আমরা নিজ দায়িত্বে ওকে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ঢাকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

চিকিৎসকদের গাফিলতির কারণেই জাবির অকালেই মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে তাকে দাফন করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হই। শেষ পর্যন্ত রাত দেড়টায় তাকে দাফন করা সম্ভব হয়।’

জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ রাষ্ট্র আমার সন্তানকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আমি আমার সন্তান হত্যার নির্মম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ