দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিয়ে নতুন করে শুনানির অনুমতি দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত আগামী সোমবার (৪ নভেম্বর) এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এ বিষয়ে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। আদালতের আদেশের পর ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন জানান, মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনায় শীর্ষ আদালত আবারও আপিল শুনতে সম্মত হয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ প্রথম এ বিষয়ে রায় দেন এবং পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর। সেই রায়ে বলা হয়—
* সাংবিধানিক পদাধিকারীদের গুরুত্ব অনুযায়ী পদমর্যাদাক্রমের শীর্ষে রাখা হবে।
* জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগের সদস্যদের অবস্থান ২৪ নম্বর থেকে উন্নীত হয়ে ১৬ নম্বরে যাবে এবং সচিবদের সমমর্যাদায় গণ্য করা হবে।
* অতিরিক্ত জেলা জজরা থাকবেন জেলা জজদের পরেই, অর্থাৎ ১৭ নম্বরে।
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, এই পদমর্যাদাক্রম কেবল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও প্রটোকলের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে, নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ডে এর ব্যবহার করা যাবে না।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান পৃথক রিভিউ আবেদন করেন। পরবর্তীতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলরাও এতে পক্ষভুক্ত হন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ‘রুলস অব বিজনেস’ অনুযায়ী প্রথম ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স প্রকাশিত হয়। ২০০০ সালে সেটি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত ওই তালিকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রায় দেয় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব আতাউর রহমানের দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে। হাইকোর্ট তার রায়ে সংশোধিত পদমর্যাদাক্রম বাতিল করে আট দফা নির্দেশনা দিয়েছিল।
দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে এখন আবারও সর্বোচ্চ আদালতের শুনানিতে বিষয়টি ওঠায়, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে কোন কোন পদ কোথায় অবস্থান করবে, তা নিয়ে নতুন করে পরিষ্কার ব্যাখ্যা আসবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।