নবজাতকের জীবনে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের হুমকি
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ এখন শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও বড় সংকট। সম্প্রতি আইসিডিডিআরবির গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর এনআইসিইউতে ভর্তি হওয়া নবজাতকদের ৮১ শতাংশের শরীরে কার্বাপেনেম প্রতিরোধী ক্লেবসিয়েলা নিউমোনি (সিআর-কেপিএন) জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। কার্বাপেনেম এমন একটি অ্যান্টিবায়োটিক, যা সাধারণত শেষ ধাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এ ওষুধও যখন অকার্যকর হয়ে যায়, তখন সংক্রমিত রোগীকে বাঁচানো চিকিৎসকদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। নবজাতকের মতো দুর্বল রোগীদের জন্য এই হুমকি বহুগুণে মারাত্মক। গবেষণার তথ্য বলছে, হাসপাতালেই সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি-যা স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুরুতর দুর্বলতা তুলে ধরে। শুধু নবজাতক নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের আইসিইউতেও ৬০ শতাংশ রোগীর দেহে এ ধরনের প্রতিরোধী জীবাণু পাওয়া গেছে। দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকা, ঘন ঘন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার ফলে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে জীবনের প্রথম বছরেই অধিকাংশ শিশু অন্তত একবার অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছে-যা তাদের প্রাকৃতিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করছে। তবে আশার আলোও আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাত ধোয়ার অভ্যাস জোরদার করা, হাসপাতালের পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের (আইপিসি) মৌলিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর বিস্তার অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। অর্থাৎ সীমিত সম্পদের মধ্যেও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ কার্যকর ফল দিতে পারে। এই বাস্তবতায় তিনটি দিক জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালগুলোতে কঠোরভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়াও অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকদের যুক্তিসঙ্গত প্রেসক্রিপশন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গবেষণা ও নজরদারির মাধ্যমে প্রতিরোধী জীবাণুর ধরণ ও বিস্তার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকে বলা হয় “নীরব মহামারি”। বাংলাদেশে নবজাতকের মধ্যে এর বিস্তার প্রমাণ করে, বিষয়টি আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য এখনই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও নীতি বাস্তবায়নে দেরি হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে। তাই এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।