সম্পাদকীয় সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে প্রয়োজন প্রশাসন। পুলিশ প্রশাসনের মূল কাজ হলো সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখা। পুলিশের হওয়ার কথা যে কোনো অপরাধীর আতঙ্ক। তবে আমাদের এটি বর্তমানে অপরাধপ্রবণ সমাজ এবং বহুকাল ধরেই অপরাধ সহাও বটে। রম্য লেখক হয়তো বলবেন, অপরাধ সখা বলাই বরং সঙ্গত। কারণ নানা কারণে সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে তরতর করে। এমন সমাজ অপরাধ-উদাসীন ও অপরাধীর প্রতি সদয়ও হয়ে থাকে। মোদ্দা কথা হলো, আমরা অপরাধের সঙ্গে সহবাস করে চলেছি। ফলে যে পুলিশের কাজ অপরাধ দমন ও অপরাধীকে ধরে বিচারে সোপর্দ করা, তারাও কমবেশি অপরাধে জড়িয়ে যেতে পারেন। দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয় ১৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার! এর মধ্যে লঘু-গুরু ভাগ করা যায়। তবে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যের লঘু অপরাধের প্রভাবও গুরুতর হতে পারে। তাই খুব লঘু শাস্তি দিয়ে লাভ হবে না। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কঠোর শাস্তি দিয়েও পুলিশের অপরাধে লাগাম টানা যাচ্ছে না। একটু পিছিয়ে গিয়ে ২০১২-১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের হিসাব নিলে দেখা যাবে, এ সময়ে বিভাগীয় মামলা যত হয়েছে- এর অন্তত ৬০-৭০ শতাংশই শাস্তি পেয়েছে। এই পাঁচ বছরে শাস্তিপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৩৯। তাদের মধ্যে অবশ্য লঘুদন্ডই বেশি- প্রায় ৬৩ হাজার। তবে শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে এএসপি, এআইজিপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন। এই হিসাবের বাইরে সরাসরি দেশের ফৌজদারি আইনে বিচারের সম্মুখীনও হয়েছেন এবং হচ্ছেন কেউ কেউ। এই ফাঁকে বলা ভালো, আমাদের পুলিশ বিভাগের উজ্জ্বল কাজও অনেক আছে। করোনাকালে তারা মানবিক সেবায় এগিয়ে এসেছিলেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। এ ছাড়া ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকালে বা দুর্র্ধষ অপরাধী ধরতে গিয়েও অনেকে প্রাণ হারান। পুলিশ ইচ্ছে করলে সব ধরনের অপরাধীকে ধরতে পারে বলেই জনগণের বিশ্বাস। এ রকম সৎ কাজ ও সৎ সাহসের প্রমাণ তারা অনেকবারই দিয়েছেন। এর বাইরে আছে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে অর্জিত সুনাম। তবে হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে যে তালভঙ্গ হয়নি- তা নয়। সহকর্মীকে ধর্ষণ থেকে অপরাধীদের সঙ্গে মিলে নিজেরাও খুন, অপহরণ, গুম, চাঁদা আদায় ইত্যাদি অপরাধে জড়ানোর কথা শোনা যায়। আমাদের মনে হয়, পুলিশের ওপর মহলের আরও সতর্ক ও পেশাদারি ভূমিকা প্রয়োজন। তা ছাড়া প্রাথমিক বাছাই থেকে প্রশিক্ষণ, নিয়োগ, পদোন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রেই নির্বাচনী ছাকনি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা দরকার। বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন, কাজের মূল্যায়ন ইত্যাদিতেও কঠোরভাবে মান বজায়ে গুরুত্ব দিতে হবে। আর চাকরি ক্ষেত্রে যে কোনো ব্যত্যয়, পদস্খলন, ভুল, অপরাধে যেন ছাড় দেওয়া না হয়। এমনিতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়, এর মধ্যে পুলিশও বেআইনি কাজে জড়ালে সাধারণ নাগরিকের দশা কেমন হবে- তা ভাবা যায় না।
You cannot copy content of this page