বিশেষ সংবাদ ঃকরোনার ধাক্কা কাটিয়ে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বাড়ছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে রাজস্ব আদায়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকা আদায় করেছে। আর আগের অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৮৭ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার ১৩ হাজার ৭৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই-নভেম্বর সময়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি ৩৬ হাজার ৬০৫ কোটি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর ভ্যাট আদায় সরাসরি ভোক্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ভ্যাট আদায় বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে ভোক্তা ব্যয়ও বেড়েছে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে ব্যয় বেড়েছে। তবে রাজস্ব আদায় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ হাজার ৯৮ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে। এই সময়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সবকিছু বন্ধ থাকায় গত বছরের এপ্রিল থেকে বেশ কয়েক মাস রাজস্ব আদায়ে স্থবিরতা বিরাজ করছিল। তবে গতবছরের জুলাই মাস থেকে রাজস্ব আদায় কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আর চলতি অর্থবছরের শুরুতেই আগের ধারায় রাজস্ব পেতে শুরু করে এনবিআর। করোনার প্রথম ধাপে ২০১৯-২০ অর্থবছর রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ছিল। দেশে রাজস্ব আদায়ে এমন পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি। ওই অবস্থা থেকে এবছর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এনবিআর।
সূত্র জানায়, করোনার প্রভাব কমে আসায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বাড়ছে। পাশাপাশি এনবিআরের মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে। মূলত অটোমেশনের কারণে রাজস্ব আদায়ে গতি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব আদায়ে আমদানি-রফতানি শুল্ক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমদানি-রফতানির শুল্ক খাত থেকে আদায় হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ওই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছরের ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) আয়কর থেকে আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ৬৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আয়কর থেকে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, করোনা পরিস্থিতি উন্নতির ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা চাঙ্গা হওয়ায় আমদানির চাহিদা বেড়েছে। ওই কারণে আমদানি শুল্ক বাড়ছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণেও রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে আমদানি শুল্ক বাড়ে। কারণ তখন বেশি দামের ওপর ভিত্তি করে পণ্যের শুল্কায়ন করা হয়।
এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যা পরিমাণ ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ওই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি ও রফতানি দুটোই বাড়ছে। তবে রপ্তানির তুলনায় আমদানি দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ২ হাজার ৩৯০ কোটি ডলারের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেছে। ওই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি।
You cannot copy content of this page