এম.জাফরান হারুন, নিজস্ব প্রতিনিধি, পটুয়াখালী:: সরকারে হুনি ঘর দ্যায়, আমারে একটা ঘর দ্যান! আর কষ্ট সইতে পারিনা। কতো কষ্টে আমি থাহি কেউ আমারে একটু দ্যাহেও না। কি ক্ষোতি করছি মেম্বার চেয়ারম্যানের। কেন আমারে দ্যাহেনা বলে অসহায় গরীব বৃদ্ধা বিধবা আলেয়া বেগম (৭৫) এর আকুতি যেন দুচোখের পানি ধরে রাখা যায় না। যেন এই বৃদ্ধার আকুতি মেঘঝড়া কান্না।
ভাংগাচুরা ঘর দেখতে মঙ্গলবার (১৬ আগষ্ট ) বিকেলের দিকে সরেজমিনে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডভূক্ত পূর্ব কালাইয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত মন্নান বাদশার স্ত্রী বৃদ্ধা বিধবা আলেয়া বেগমের বাড়ি গেলে সাংবাদিক এসেছে ঘর দেখতে কথা শুনেই আকুতি করতে করতে ভাংগাচুরা ঘর থেকে বের হতেই ভাংগা পুরানো টিনের খোচায় মাথার উপর কাপড়ের আচলটি ছিড়ে যায়। তা ছাড়িয়ে এসেই বলে ‘ ওবাবা কির লইগ্গা আইছ, কি দ্যাকতে আইছ, আমার ঘর দ্যাকতে আইছ, দ্যাহো বেশি বেশি কৈররা দ্যাহো! আমি এই ঘরে দিনরাইত কতো কষ্ট করতে আছি। আমারে কেউ দ্যাহেনা। সরকারে হুনি ঘর দ্যায়, আমারে একটা ঘর দ্যান! আর কষ্ট সইতে পারিনা! কতো কষ্টে আমি থাহি কেউ আমারে একটু দ্যাহেও না। কি ক্ষোতি করছি মেম্বার চেয়ারম্যানের। কেন আমারে দ্যাহেনা বলে কান্নাকাটি করতে থাকে বৃদ্ধা আলেয়া বেগম। পরে সান্ত্বনা দিয়ে থামানো হয় তাকে।
এসময় বাড়ির লোকজন সহ আশপাশের লোকজন জানান, আজ থেকে প্রায় ১৫/১৮ বছরের মতো হবে তার স্বামী মারা যায়। যদিও তার দুই মেয়ে তা স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় বিয়ে দিয়ে যায়। তারপর থেকে এই বৃদ্ধা আলেয়া বেগম একা হয়ে যান। জীবন বাচানোর তাগিদে বৃদ্ধা বয়সে মানুষের বাসায় বাসায় কাজকর্ম করেন। সন্ধ্যা হলেই মাথা গোজার জন্য একটু ঘুমানোর জন্য এই ভাংগাচুরা ঘরে আশ্রয় নেন। ঘর-দুয়ার ভালো না দেখে প্রায় ৮/১০ বছরের মতো হয় মেয়ে ও জামাই আসেনা। প্রতিদিন এই ঘরে দুর্ভোগ ভোগান্তিতে কাটে দিনরাত তার। একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই দৌড়ে চলে আসে আমাদের ঘরে। আর কান্নাকাটি করে।
লোকজন আরও জানান, যাদের ঘর নেই তাদেরকে সরকার প্রশাসন ঘর দেয়। আমাদের পক্ষ থেকে আকুল আবেদন সরকার প্রশাসনের প্রতি তারা যেন এই বৃদ্ধা আলেয়ার খোঁজখবর নিয়ে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেন। এর মতো অসহায় হতবাগি আর কেউ নেই। আজকে যদি ছেলে থাকত তাহলে আশা ভরসা ছিল। এর কষ্ট আমাদের আর সৈর্য্য হয় না।
এপ্রসঙ্গে স্থানীয় মেম্বার মোহাম্মদ জালাল মোল্লা বলেন, একবার তার কাগজপত্র এনেছিলাম!
স্থানীয় চেয়ারম্যান এসএম ফয়সাল আহমেদ বলেন, শুনেছি মহিলাটা খুব কষ্টে আছে। তার একটা ঘরের খুব প্রয়োজন। যাতে মহিলাটার মাথা গোজার একটু ঠাই হয় সেই লক্ষ্যে একটি সরকারি ঘর পাওয়ার জন্য চেষ্টা করব।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, এখন ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দ চলছে। যেহেতু আপনি প্রতিবেদকের কাছ থেকে বিষয়টি জানলাম অবশ্যই তাকে গৃহহীনদের তালিকায় রেখে ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।
You cannot copy content of this page