দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুনভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন এ নীতিমালায় নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার পূর্বের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন শর্ত যুক্ত হয়েছে। নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া অনুসারে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে কমিশন।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এই তথ্য নিশ্চিত করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি জানান, নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কমিশন পর্যবেক্ষণ নীতিমালাটি চূড়ান্ত করেছে এবং খুব দ্রুতই তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সংস্থার কর্মকৌশল, গঠনতন্ত্র ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা যাচাই করা হবে। আগের নীতিমালায় যেখানে পর্যবেক্ষক হওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এসএসসি বা সমমান, সেখানে এবার তা বাড়িয়ে এইচএসসি বা সমমান করা হয়েছে।
যেসব সংস্থা অতীতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাদের নিবন্ধন না দেওয়ার স্পষ্ট বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী ব্যক্তি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলে কিংবা প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা থাকলে, সেই সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না।
নতুন নীতিমালার ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, নিবন্ধনপ্রার্থী সংস্থাগুলোর আবেদন ফরম (EO-1) পূরণ করে নির্ধারিত কাগজপত্রসহ নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং তাতে আপত্তির সুযোগ থাকবে। আপত্তির ভিত্তিতে শুনানি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
প্রত্যেক নিবন্ধনের মেয়াদ থাকবে ৫ বছর। এই সময়ের মধ্যে সংস্থাগুলোকে অন্তত ১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ৪টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। একইসঙ্গে দুই বছর পরপর বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিবন্ধন নবায়ন করা যাবে। নবায়নের আবেদনপত্র জমা দিলে কমিশন চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
যদি কোনো সংস্থা নীতিমালা লঙ্ঘন করে কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তাহলে কমিশন নোটিশ দিয়ে জবাব চাবে। শুনানির মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেই সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করা হবে। এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বিবেচিত হবে।
নতুন নীতিমালার ৮ নম্বর ধারা অনুসারে, পর্যবেক্ষক হতে হলে—
• বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে;
• বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২৫ বছর;
• ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমান পাস করতে হবে;
• কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা যাবে না;
• মনোনীত সংস্থার মাধ্যমে নাম নিবন্ধন করতে হবে;
• অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর ও সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি মানতে হবে।
“Guidelines for International Election Observer and Foreign Media”-তে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসি পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের প্রথা চালু করে। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। পরবর্তী তিনটি জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ও নিবন্ধিত সংস্থার পরিমাণ ছিল নিম্নরূপ:
• ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ৩৫টি সংস্থা, ৮ হাজার ৮৭৪ জন পর্যবেক্ষক।
• ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ৮১টি সংস্থা, ২৫ হাজার ৯০০ জন পর্যবেক্ষক।
• ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ৮০টি সংস্থা, ২০ হাজার ২৫৬ জন পর্যবেক্ষক।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এই নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, পর্যবেক্ষকদের জন্য স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা উচিত ছিল। কারণ ভোট পর্যবেক্ষণ কেবল উপস্থিতি দেখানো নয়, পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবেদন দাখিলও এর অংশ