
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী জনগণের পাশে: প্রধান উপদেষ্টা
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের আস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, “জুলাই অভ্যুত্থান ও চলমান রাষ্ট্রসংস্কারের সময় সেনাবাহিনী দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে জনগণের বিশ্বাস অটুট রেখেছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সহাবস্থান ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। তবুও যে কোনো বহিঃশত্রুর আগ্রাসন মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীকে সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
জাতিসংঘ মিশন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
ড. ইউনূস জানান, বর্তমানে ১০টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনাসদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণেও বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে স্বীকৃত। কাতারসহ আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশি সেনা সদস্য নিতে আগ্রহী, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঐতিহাসিক ২১ নভেম্বরের গুরুত্ব
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর বাঙালি সেনা সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণের সমন্বিত আক্রমণ বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। অতুলনীয় ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
তিনি ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণ করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আহ্বান
দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে আসন্ন নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নির্বাচনকে আনন্দমুখর ও উৎসবমুখর করতে সকলকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। তিনি জানান, নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং এ নির্বাচন দেশের নতুন যাত্রাপথ রচনা করবে।
সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি না হওয়ায় পূর্ববর্তী সরকারের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে, যা দেশে একটি শক্তিশালী ও আধুনিক সামরিক বাহিনী গড়তে সহায়ক হবে।”
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠিত রূপ ও বীরত্বগাঁথা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর বাঙালি সেনা, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র—সবাই মিলেই সর্বাত্মক জনযুদ্ধের সূচনা করেন। পরে যুদ্ধরত সব বাহিনীকে একীভূত করে ‘বাংলাদেশ ফোর্সেস’ গঠন করা হয় এবং দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে যুদ্ধ পরিচালিত হয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নৌকমান্ডোদের ‘অপারেশন জ্যাকপট’ এবং বিমানবাহিনীর সদস্যদের ‘কিলোফ্লাইট’ অভিযান ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় দুঃসাহসিক অধ্যায়।